Saturday, October 11, 2025

সর্বোচ্চ হরিলুট চালাতে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষমতায় থাকার পরিকল্পনা ইউনূস বাহিনীর

Share

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টা পরিষদের বিরুদ্ধে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাটের একটি সুপরিকল্পিত নীলনকশার অভিযোগ উঠেছে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইউনূস বাহিনীর বিতর্কিত কর্মকাণ্ড দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে গভীর সংকটের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।

৪৪৫ কোটি টাকার গাড়ি ক্রয়: হরিলুটের নতুন অধ্যায়

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতিতে আগামী সরকারের মন্ত্রীদের জন্য ১০১ কোটি টাকার বেশি মূল্যের ৬০টি মিতসুবিশি পাজেরো গাড়ি কেনার প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। প্রতিটি গাড়ির মূল্য প্রায় ১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। এছাড়া, নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের জন্য আরও ২২০টি গাড়ি ক্রয়ের পরিকল্পনা রয়েছে, যার মোট ব্যয় প্রায় ৪৪৫ কোটি টাকা। বিশ্লেষকেরা এটিকে ‘হরিলুট’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। সাংবাদিক মাসুদ কামাল একটি টেলিভিশন টকশোতে বলেন, “যে সরকার গেছে, তারা গাড়ি নিয়ে যায়নি। এত তাড়াহুড়ো করে গাড়ি কেনার পেছনে কমিশনের লোভই মূল কারণ।”

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক তাজনুভা জাবীন তাঁর ফেসবুক পোস্টে এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করে লেখেন, “ইউনূসের উপদেষ্টা পরিষদ বন্ধুদের জন্য আগাম গাড়ির ব্যবস্থা করে দিচ্ছে, যাতে মন্ত্রী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিলাসবহুল গাড়িতে চড়তে পারেন। এটি কতটা কেয়ারিং মনোভাব, তা স্পষ্ট!”

সাইবার হুমকির আড়ালে অর্থ পাচারের ছক

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সম্প্রতি সব তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পাঠানো এক সতর্কবার্তায় সম্ভাব্য সাইবার হামলার আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি কেবল নিরাপত্তা প্রস্তুতি নয়, বরং রাষ্ট্রীয় অর্থ পাচারের একটি পূর্বপ্রস্তুতি। গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে, গত জুলাই মাসে ইউনূসপন্থী কিছু অনলাইন পেমেন্ট চ্যানেলে অস্বাভাবিক লেনদেন শনাক্ত হয়েছে, যা মানি লন্ডারিং আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এই অর্থ পাচারচক্রে আন্তর্জাতিক সংযোগ এবং দেশের অভ্যন্তরীণ দালালদের সহযোগিতার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের এই ‘সাইবার হুমকির’ বার্তা অর্থচুরির ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তারা জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে ব্যাংকিং ও ডিজিটাল পেমেন্ট সেক্টরের লেনদেন খতিয়ে দেখার জন্য বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন।

ক্ষমতা ধরে রাখার নীলনকশা

দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, ইউনূস তার ঘনিষ্ঠদের দিয়ে ১০০টি আসন নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা করছেন। এসডিজি-বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদসহ ১০০ জনকে স্বতন্ত্রভাবে জিতিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন, তারা ইউনূসকে ১০০ আসন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিএনপিকেও ১০০ আসন দেওয়ার কথা রয়েছে। ফলে যে কোনো দলই সরকার গঠন করতে চাইলে ইউনূসের পছন্দের ব্যক্তিদের ছাড়া সম্ভব হবে না। এই প্রক্রিয়াকে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।

পাতানো নির্বাচন ও পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রকাশিত ৭৩টি পর্যবেক্ষক সংস্থার তালিকা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অনেক সংস্থার কার্যালয় নেই বা পরিত্যক্ত ঘরকে কার্যালয় হিসেবে দেখানো হয়েছে। কিছু সংস্থার নেতৃত্বে রাজনৈতিকভাবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা রয়েছেন, যা ইসির নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। উদাহরণস্বরূপ, কুড়িগ্রামের অগ্রযাত্রা সমাজ উন্নয়ন সংস্থার কোনো কার্যক্রম নেই, এবং গরীব উন্নয়ন সংস্থার কার্যালয় আসলে নির্বাহী পরিচালকের বাড়ি।

ইসি সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ দাবি করেছেন, সংস্থাগুলোর তথ্য মোটাদাগে যাচাই করা হয়েছে। তবে, ২০ অক্টোবরের মধ্যে আপত্তি জানানোর সুযোগ থাকলেও এই প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

ভোটার তালিকায় ছলচাতুরি

ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে ব্যাপক ত্রুটির অভিযোগ উঠেছে। চরাঞ্চল ও প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে তথ্য সংগ্রহের কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান না হওয়ায় লক্ষাধিক নাগরিক ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। একজন চরবাসী বলেন, “ইসি বলছে কাজ শেষ, কিন্তু আমাদের কেউ তথ্য নিতে আসেনি। এটা স্পষ্ট ছলচাতুরি।”

গণতন্ত্রের ভিত্তি বিপন্ন

অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “ইউনূসের উপদেষ্টা পরিষদের পদক্ষেপগুলো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাবে পরবর্তী সরকারের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।” তিনি সরকারের ‘এক্সিট পলিসি’ ও দায়বদ্ধতার প্রকাশের দাবি জানান।

ইউনূসের উপদেষ্টা পরিষদের এই কর্মকাণ্ড—গাড়ি ক্রয়, অর্থ পাচারের অভিযোগ, নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের পরিকল্পনা, এবং ভোটার তালিকার ত্রুটি—দেশের গণতান্ত্রিক ভিত্তি ও আর্থিক নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ছাড়া বাংলাদেশ আরও অস্থিতিশীলতার দিকে ধাবিত হতে পারে। সময় এসেছে জনগণের অংশগ্রহণ ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার।

Read more

Local News