নিজস্ব প্রতিবেদক
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের জনগণের প্রতি এক উদাত্ত আহ্বান জঙ্গিবাদ দমনে যাদের অবদান, বাংলাদেশের সেই বীর গোয়েন্দারা আজ বিপদে। তাই তাঁদের পাশে দাঁড়ানো এখন সময়ের দাবি। বাংলাদেশের নিরাপত্তা ইতিহাসে এক গৌরবময় অধ্যায়ের নাম জঙ্গিবাদ দমন। ২০০০ সালের পর থেকে রাষ্ট্রের নেতৃত্ব, গোয়েন্দা সংস্থা ও সশস্ত্র বাহিনীর সমন্বিত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ এমন এক দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে, যারা জঙ্গিবাদ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে “জিরো টলারেন্স নীতি” বাস্তবায়নে বাস্তব সাফল্য দেখিয়েছে।
বিশ্বের অনেক দেশ যেখানে ধর্মীয় চরমপন্থার আগ্রাসনে টালমাটাল, সেখানে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো, বিশেষ করে ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই), প্রমাণ করেছে দক্ষ নেতৃত্ব, তথ্যনির্ভর পরিকল্পনা ও পেশাদার গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে কিভাবে একটি দেশকে নিরাপদ রাখা যায়।
এই সাফল্যের পেছনে যাদের নেতৃত্ব ও ত্যাগ অনস্বীকার্য, তাদের মধ্যে রয়েছেন ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালকবৃন্দ—লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. আকবর হোসেন, মেজর জেনারেল সাইফুল আবেদিন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাইফুল আলম, লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ তাবরেজ শামস চৌধুরী এবং মেজর জেনারেল হামিদুল হক। তাদের পেশাদারিত্ব, বিচক্ষণতা ও আত্মত্যাগের ফলেই বাংলাদেশ জঙ্গিবাদ দমনে বিশ্বের কাছে রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে যেভাবে এই বীর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগের খবর প্রকাশিত হচ্ছে, তা বিভিন্ন মহলে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। অনেকে মনে করেন, যারা এক সময় সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ফ্রন্টলাইনে থেকে দেশের নিরাপত্তা রক্ষায় নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদেরকেই এখন প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে যা গোয়েন্দা ও সামরিক বাহিনীর মনোবলের জন্য শুভ নয়।
রাষ্ট্রের প্রতি তাদের আনুগত্য, দেশের নিরাপত্তা রক্ষায় তাদের অবদান এবং দীর্ঘদিনের পেশাদার ইতিহাস ন্যায়সংগত ও নিরপেক্ষ মূল্যায়নের দাবিদার। অভিযোগ থাকলে তদন্ত হোক কিন্তু তা যেন হয় স্বচ্ছ, প্রমাণনির্ভর ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্তভাবে। কারণ একজন বীর কর্মকর্তার সম্মান নষ্ট হলে, তা কেবল একজন ব্যক্তির ক্ষতি নয়; বরং পুরো নিরাপত্তা কাঠামোর প্রতি জনগণের আস্থাও নষ্ট হয়।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক কিছু প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়া দেশের পেশাদার গোয়েন্দা কাঠামোকে অযথা চাপে ফেলছে।
বাংলাদেশের মানুষ চায় শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা কোনোভাবেই জঙ্গিবাদ বা অরাজকতা নয়। অতএব রাষ্ট্রের উচিত সেই জাতীয় অর্জন জঙ্গিবাদ দমনের সফল ইতিহাস রক্ষা করা, এবং যারা এই ইতিহাসের স্থপতি ছিলেন, তাঁদের সম্মান সুরক্ষিত রাখা।
বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই প্রমাণ করেছে—রাজনৈতিক সদিচ্ছা, পেশাদার নেতৃত্ব ও ঐক্য থাকলে জঙ্গিবাদ দমন সম্ভব। এখন সময় সেই ঐতিহ্য ধরে রাখা এবং যারা এই সাফল্যের নেপথ্যে ছিলেন, তাঁদের মনোবল দৃঢ় রাখা।
বাংলাদেশে জুলাই দাঙ্গার সময় কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগার থেকে ২০৯ জন বন্দির পালিয়ে যাওয়া এবং নরসিংদীতে সাজাপ্রাপ্ত জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বড় ধরনের ব্যর্থতা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। একই সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীর ঢাকায় প্রকাশ্যে ‘খেলাফত মার্চ’ আয়োজন করে, যা থামাতে ব্যর্থ হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সূত্র বলছে, এসব ঘটনায় ইউনূসের সংশ্লিষ্টরা রয়েছে। তিনি এর আগে জামায়াত আমিরের সঙ্গে এক টেলিফোন আলাপে বলেছিলেন যে, তিনি জামায়াতকে পছন্দ করেন। মূলত এ বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট ইউনূসই জামায়াতের এই জঙ্গি কার্যক্রমকে মদত দিচ্ছেন।
দেশের এমন অরাজক অবস্থায় ন্যায়বিচার, স্বচ্ছতা ও সত্য প্রতিষ্ঠিত হলে কেবল অভিযোগ নয়, দেশের সার্বভৌম মর্যাদাই রক্ষা পাবে। এ পরিস্থিতিতে জঙ্গিবাদ দমনে যাদের অবদান অপরিসীম ছিল তাঁদের পাশে দাঁড়ানো মানেই বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার পাশে দাঁড়ানো।