Saturday, October 11, 2025

ড. ইউনুস মনে করেন, জামাত–এনসিপিই তার নিরাপদ আশ্রয়স্থল

Share

নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় ড. মুহাম্মদ ইউনুস এখন এমন এক অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছেন, যেখানে ক্ষমতা ধরে রাখার পাশাপাশি নিজের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিয়েও তিনি গভীরভাবে চিন্তিত। অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে থেকেও তিনি যে স্থায়ী রাজনৈতিক পরিণতির মুখে পড়ছেন, তা আর গোপন নেই। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ইউনুস এখনো মনে প্রাণে চান—জামাত ইসলামি ও এনসিপি জোটকে ক্ষমতায় বসিয়ে নিজেকে “নিরাপদ প্রস্থান”-এর সুযোগ তৈরি করতে।

গোয়েন্দা ও ইউনুস সেন্টারের যৌথ প্রচারণা
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার একটি অংশ এবং ইউনুস সেন্টারের ঘনিষ্ঠ মহল একযোগে কাজ করছে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক লক্ষ্য নিয়ে। সামাজিক মাধ্যমে বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতন ও দুর্নীতির অভিযোগ ছড়িয়ে জনগণের মধ্যে বিএনপিবিরোধী মনোভাব জাগানো হচ্ছে।

এই প্রচারণার মূল টার্গেট তারেক রহমান। তাঁকে উপস্থাপন করা হচ্ছে “চাঁদাবাজ রাজনীতির প্রতীক” হিসেবে, যাতে বিএনপি ধীরে ধীরে জনসমর্থন হারায় এবং বিকল্প হিসেবে জামাত–এনসিপি জোটকে গ্রহণযোগ্য করে তোলা যায়। এ যেন রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও গোয়েন্দা তথ্য ব্যবহার করে পরিকল্পিত রাজনৈতিক চরিত্রহননের এক নতুন রূপ যার উদ্দেশ্য বিএনপিকে দুর্বল করা, এবং জামাত–এনসিপিকে “যোগ্য বিকল্প” হিসেবে জনগণের সামনে তুলে ধরা।

জামাত–চরমোনাইয়ের বিএনপি-বিরোধী তৎপরতা
অন্যদিকে, জামাত ইসলামি ও চরমোনাই পীরের অনুসারীরা এখন প্রকাশ্যেই বিএনপির বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে। জামাত নেতারা বলছেন, বিএনপি রাজাকারদের দল চরমোনাইয়ের বক্তৃতামঞ্চে উঠে আসছে “হাওয়া ভবনের চাঁদাবাজি”র প্রসঙ্গ—যা বিএনপির ভাবমূর্তিকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এসব প্রচারণা এলোমেলো নয়, বরং ইউনুসের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ইঙ্গিতেই পরিচালিত হচ্ছে। এর মাধ্যমে জনগণের মনে একটি নতুন ধারণা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে বিএনপি আর বিশ্বাসযোগ্য নয়, বরং জামাত–এনসিপিই হতে পারে ‘পরিবর্তনের’ নতুন শক্তি।

ইউনুসের নিরাপদ প্রস্থানের পরিকল্পনা
অন্তর্বর্তী সরকারের ছত্রছায়ায় পরিচালিত কয়েকটি জরিপে দেখা যাচ্ছে, এনসিপি ও জামাতকে ইচ্ছাকৃতভাবে “বৃহৎ রাজনৈতিক শক্তি” হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। এই কৌশলের পেছনে রয়েছে ইউনুসের ব্যক্তিগত স্বার্থ যদি এই দুটি দল ক্ষমতায় আসে, তবে তাঁর বিরুদ্ধে থাকা দুর্নীতি, অর্থপাচার ও রাষ্ট্রবিরোধী মামলাগুলো নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে।

তাছাড়া, জামাত ও এনসিপি উভয়ই ইউনুস সরকারের দায়মুক্তি নিশ্চিত করবে এমন ধারণাই প্রচলিত। ফলে ইউনুসের ঘনিষ্ঠ পরিসরে এখন দৃঢ় বিশ্বাস তৈরি হয়েছে, “জামাত–এনসিপিই আমাদের নিরাপদ আশ্রয়। একই সঙ্গে পশ্চিমা কূটনৈতিক মহলেও এই ধারণার প্রতি নীরব সমর্থন রয়েছে বলে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা চলছে।

জাতির জন্য এক নতুন বিপদ
বাংলাদেশ এখন অর্থনৈতিক সংকট, বেকারত্ব ও সামাজিক অস্থিরতার কঠিন বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে আছে। এই অবস্থায় যদি জামাত–এনসিপিকে রাজনৈতিক বৈধতা দেওয়া হয়, তবে তা কেবল ড. ইউনুসের দায়মুক্তি নিশ্চিত করবে না, বরং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্রের ভিত্তিকে গভীরভাবে নাড়া দেবে। যে বাংলাদেশ একদিন প্রগতিশীল ও আধুনিকতার পথে এগোচ্ছিল, সেটি আবারও ধর্মীয় রাজনীতি ও বিদেশি প্রভাবের অন্ধকারে নিমজ্জিত হতে পারে।

রাজনীতি আজ এমন এক মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে ক্ষমতা নয় দায়মুক্তিই হয়ে উঠেছে প্রধান লক্ষ্য। যদি ড. ইউনুস সত্যিই জামাত–এনসিপির মাধ্যমে নিজের নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে চান, তবে তা হবে জাতির প্রতি এক গভীর বিশ্বাসঘাতকতা। কারণ, এই দেশের মানুষ কখনোই এমন রাজনীতি চায় না যেখানে একজন ব্যক্তির নিরাপত্তার জন্য রাষ্ট্রের আদর্শ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্রকে বিসর্জন দিতে হয়।

Read more

Local News