নিজস্ব প্রতিবেদক
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সত্যিই একজন জ্ঞানী ব্যবসায়ী, সেই সাথে তিনি একজন ধূর্ত চোর; যার প্রমাণ বছরের শুরুতে বই ছাপানো নিয়ে কৃত্রিমভাবে জটিলতা সৃষ্টি করে নানা দুর্নীতির পসরা সাজিয়ে কোটি টাকা লুট করে তিনি জাতির সামনে উপস্থাপন করেছেন। শিশুদের মেধা বিকাশের উপকরণ বা সরকারি ভাবে ছাপানো বই থেকে অর্থলুটপাট কিংবা ব্যবসা এখনো চলমান। বলা বাহুল্য, ‘মেধা না কোটা’র মেটিকুলাস ডিজাইনার ইউনূস সাহেব তার শয়তানি মেধা খরচ করে শুধু একাই লাভবান হননি; বরং, তারই নব্যগঠিত কিংস পার্টি এনসিপির নেতারাও বাচ্চাদের সরকারি বইয়ের উপর এই চুরি চক্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলো।
প্রথমেই আসি ইউনূস প্রশাসনের বই চুরি ও ব্যবসা চক্রের সাম্প্রতিক খবরে- এ বছরের শুরুর দিকের কয়েক মাস বাচ্চারা নতুন বই হাতে না পেলেও এবার শোনা যাচ্ছে অন্যখবর। বই ঠিকই ছিলো কিন্তু সংকট দেখিয়ে সরকারিসহ নিবন্ধনকৃত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিন্ডারগার্টেনে শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করে স্টক করে রাখা হয়েছিলো বইগুলো। দৈনিক যুগান্তরের বরাতে জানা গেছে, ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় স্টকে থাকা প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক পর্যায়ের সরকারি পর্যাপ্ত নতুন বই কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
পত্রিকাটির প্রতিবেদনের কিছু অংশ হুবহু তুলে ধরা হলো- সোমবার (৬ অক্টোবর) দুপুরে নান্দাইল উপজেলা পরিষদ পুরাতন হল রুমের সামনে দাড়িঁয়ে রয়েছে কার্গো ট্রাক। শ্রমিকরা পুরাতন হল রুম থেকে বই মাথা করে নিয়ে এসে গাড়িতে উঠাচ্ছেন। পাশে বসেই বইয়ের হিসাব নিচ্ছেন সহ-শিক্ষা অফিসার (এটিও) হাফিজুর রহমান। তবে কোনো ধরনের মিটার স্কেল ছাড়াই বা পরিমাপক যন্ত্র ছাড়াই প্রতি বান্ডেল বই ১২ কেজি হিসেবে গাড়িতে উঠানো হচ্ছে। এদিন ৯ হাজার ৭২ কেজি বই বিক্রি করা হয় এবং আরও অর্ধেক বই হল রুমে রয়ে গেছে, যা পরবর্তীতে গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। প্রথম দিনে ১ লাখ ৩৬ হাজার টাকার বই বিক্রি করা হয়েছে।
তবে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোছা. ফজিলাতুন্নেছা ২০২৫ সালের বই বিক্রি হচ্ছে না বলে দাবি তুলেন। কিন্তু পুরো বছর জুড়ে বই ছাপানো থেকে শুরু করে বিতরণের বিলম্ব এবং সর্বশেষ সংকট দেখিয়ে স্টক থেকে বিক্রি জনিত নানা অসংগতি প্রকাশ পেয়েছে৷
বাংলা ট্রিবিউনের গত ৮ই জুন ২০২৫ এর একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের প্রায় ৪০ কোটি পাঠ্যবই ছাপাতে ইউনূসের অবৈধ সরকার অতিরিক্ত ব্যয় করেছে ১০০ কোটি টাকারও বেশি। দুর্নীতি বাজ ইউনূস গং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) নির্ধারিত প্রাক্কলিত দরের তুলনায় গড়ে ২০ শতাংশ বেশি দরে ছাপিয়েছে সাড়ে ১২ কোটি কপির বেশি বই। এতে সরকারের মোট ব্যয় দাড়িয়েছে ৫৫৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা, যেখানে প্রাক্কলিত দরে এই খরচ হওয়ার কথা ছিল ৪৪৫ কোটি টাকার আশেপাশে।
কিন্তু ২০০৬ সালের পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্ট (পিপিএ) এবং ২০০৮ সালের পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস (পিপিআর) অনুযায়ী, কোনো পণ্য বা সেবার জন্য সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রাক্কলিত দরের ১০ শতাংশের বেশি হলে রি-টেন্ডার বাধ্যতামূলক। কিন্তু এবারের পাঠ্যবই ছাপার ক্ষেত্রে সে নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আরও অতিরিক্ত দরে দরপত্র দেওয়া হয়েছে দেশীয় মুদ্রণ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে।
বাংলাদেশের মানুষের নিশ্চয় কিংস পার্টি এনসিপির নেতা গাজী সালাউদ্দিন তানভীরের কথা স্মরণ আছে। অতিরিক্ত মূল্যে বই ছাপানোর সাথে এই জুলাই সন্ত্রাসীরও একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগসাজশ রয়েছে। দৈনিক ইনকিলাবের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে – ‘মার্চ মাসের ১০ দিন পার হলেও এখনো শিক্ষার্থীরা পুরোপুরি বই পায়নি। মুদ্রণপ্রতিষ্ঠানগুলো যথাসময়ে বই সরবরাহ করতে পারেনি। কারণ এনসিটিভির পাঠ্যবই ছাপায় কাগজের বাজারদরের চেয়ে টনপ্রতি ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা বেশি দিতে হয়েছে মুদ্রণপ্রতিষ্ঠানগুলোকে। ফলে তারা বিক্ষুব্ধ। অভিযোগ রয়েছে এনসিটিবির কয়েকজন কর্মকর্তাকে হাত করে এই গাজি সালাউদ্দিন আহমেদ তানভীর সিন্ডিকেট করেছেন। নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে বই ছাপানোর কাগজ কিনলেই কেবল বই ছাপার ছাড়পত্র দেয়া হয়। না কিনলে ছাড়পত্র মেলেনি। ছাত্র সমন্বয় পরিচয়ে প্রভাব খাটিয়ে সালাউদ্দিন আহমেদ এনসিটিবির অসাধু কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে নির্ধারিত প্রতিষ্ঠান থেকে মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানকে কাগজ কিনতে বাধ্য করেছেন। শুধু কাগজ থেকে ৪০০ কোটি টাকার বেশি কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ এসেছে গাজি সালাউদ্দিন আহমেদ তানভীরসহ এনসিটিবির কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।’
কি ভাবছেন? এখানে ইউনূসের নাম নেই কেন? কিভাবে থাকবে, সে তো আন্তর্জাতিক মানের দুর্নীতিবাজ। গ্রামীণ ব্যাংকে যে লোক ৬ হাজার টাকা বেতনে চাকরি শুরু করেছিলো, সে কয়েকবছর পরেই কিভাবে বিলিয়ন ডলার অনুদান দেয় ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে প্রথমে সেই হিসাব মেলাতে হবে জনগণকে। প্রশ্ন করুন ইউনূসকে, দেখবেন ঘুরিয়ে পেচিয়ে এমন কিছু বলবে যা আপনার মাথার ওপর দিয়ে যাবে। একটা কথা চিন্তা করুন, যে ব্যাক্তি ক্ষমতায় বসেই নিজের ব্যবসা সম্প্রসারণ করে নিয়ে জনগণের হকের ৬৬৬ কোটি টাকার কর ক্ষমতার অপব্যবহার করে মাফ করিয়ে নিতে পারে, সেই অর্থলোভী কেন বই ছাপানোর শতশত কোটি টাকার দুর্নীতিতে অংশ নেবে না? এই দুর্নীতিতে তার ভাগ কত, এ বিষয়ে কেনই বা আমরা সাধারণ মানুষেরা প্রশ্ন করবো না? যাদের বাচ্চারা নতুন বই হাতে পেলো না তাদের প্রশ্ন করতেই হবে ফ্যাসিস্ট ইউনূসকে৷
কেউ কেউ বলবে, এটা তো শুধু একটি উপজেলার চিত্র এবং এরপর বিষয়টিকে তুচ্ছজ্ঞান করার অপচেষ্টা চালানো হবে, গণশত্রু শফিকও উঠে পড়ে লাগবে প্রোপাগান্ডা ছড়াতে৷ কিন্তু মুখ্য বিষয়টি হলো- এটি শুধু একটি মাত্র ঘটনা কারণ মিডিয়ার কাছে এই একটাই ধরা পড়েছে, সারাদেশের বাকি উপজেলাতে ইতোমধ্যেই বই চুরির ঘটনা যে আড়ালে সম্পাদিত হয়নি, তার নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবে না। আর এত অনাচার, জুলুম, দুর্নীতির পরেও ইউনূস কখনো নিজের ব্যর্থতার দায় স্বীকার করেনি, এ বিষয়টি জাতির কাছে অত্যন্ত পরিষ্কার।