নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলায় অভিযুক্ত ১৫ জন সেনা কর্মকর্তাকে হেফাজতে নিয়েছে সেনাসদর। তবে এখন পর্যন্ত খোঁজ মেলেনি মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদের। সূত্র বলছে, রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক করিডর বাস্তবায়নে সেনাবাহিনীকে অস্থিতিশীল করতে চায় ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার।
শনিবার সেনানিবাসে সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান সংবাদ সম্মেলনে জানান, ট্রাইব্যুনালের তিনটি মামলায় মোট ২৫ জন সেনা সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯ জন অবসরপ্রাপ্ত, একজন এলপিআরে (লিভ প্রিপারেটরি টু রিটায়ারমেন্ট) আছেন, আর বাকি ১৫ জন এখনো সেনাবাহিনীতে কর্মরত রয়েছেন।
তিনি বলেন,আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ২৫ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ার ঘটনায় সেনাবাহিনী নৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।পুরো জাতি এখন নির্বাচনমুখী। গত ১৩-১৪ মাস ধরে সেনাবাহিনী মাঠে কাজ করছে। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাব্যবস্থার উন্নয়নে সেনাসদস্যরা বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।
আগামী জাতীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের পরিমাণ তিন গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হবে বলে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। ট্রেনিং, পোস্টিং, প্রমোশনসহ সব ধরনের প্রস্তুতি চলছে। এমন সময় এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ঘটনাটি সেনাসদস্যদের মনোবলে কিছুটা প্রভাব ফেলেছে। এ ঘটনায় সেনাবাহিনী মোর্যালি ইফেক্টেড (নৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত).. মোর্যালি আপসেট (নৈতিকভাবে বিপর্যস্ত)। তবে সবকিছুর ঊর্ধ্বে থেকে আমরা সব সময় ন্যায়ের পক্ষে থাকব।’
মেজর জেনারেল হাকিমুজ্জামান বলেন, গত ৮ অক্টোবর চার্জশিট দাখিলের পর সেনাসদর থেকে নির্দেশ দেওয়া হয় যে সার্ভিসে থাকা এবং এলপিআরে থাকা কর্মকর্তারা ৯ অক্টোবরের মধ্যে রিপোর্ট করবেন। নির্দেশ অনুযায়ী সবাই উপস্থিত হলেও মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ নির্ধারিত সময়ের পর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন।
তিনি আরও জানান, “১৫ জন কর্মকর্তাকে সেনাসদরে এনে বর্তমানে হেফাজতে রাখা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে তারা আপাতত পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের বাইরে রয়েছেন।”
এর আগের সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল মানবিক করিডর একটি স্পর্শকাতর বিষয়। দেশের জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কোনো কাজে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সম্পৃক্ত হবে না। এরপরই সেনাবাহিনীকে নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করে ইউনূস গংয়েরা। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য প্রস্তাবিত তথাকথিত ‘মানবিক করিডোর’ বাস্তবায়নের নামে দেশের সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলতে চতুর্মুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন তারা। এই ষড়যন্ত্রের মাস্টারমাইন্ড ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান।
অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসনের একটি অংশের সহযোগিতায় টেকনাফ থেকে মিয়ানমারের মংডু অঞ্চলে অস্ত্র পাচার করা হচ্ছে, যার সঙ্গে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মি জড়িত। এমনকি এই চক্রান্তে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকেও জড়ানোর চেষ্টা চলছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, রাখাইন বাংলাদেশের কক্সবাজার সীমান্তের একেবারে লাগোয়া। যদি সেখানে করিডর খোলা হয়, তখন— রোহিঙ্গাদের নতুন ঢল বাংলাদেশে প্রবেশের আশঙ্কা বাড়বেসীমান্তে অস্ত্র, মাদক ও মানবপাচার আরও বেড়ে যেতে পারে। নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর চাপ বাড়বে। চীন, ভারত, ও পশ্চিমা দেশগুলোর ভিন্ন স্বার্থ আছে রাখাইন অঞ্চলে (বিশেষত বন্দর ও গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্পে)। মানবিক করিডরের মাধ্যমে যদি কোনো পক্ষ সেখানে প্রভাব বিস্তার করে, তাহলে এলাকাটি নতুন ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার ময়দানে পরিণত হবে।
যদি রাখাইনে মানবিক করিডর গড়ে উঠে কিন্তু রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, টেকসই প্রত্যাবাসনের কাঠামো না থাকে, তাহলে মিয়ানমার সরকার বলতে পারে — “দেখো, আমরা ত্রাণ দিচ্ছি, এখন আর ফেরত পাঠানোর দরকার নেই।” ফলে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আরও বিলম্বিত ও রাজনৈতিকভাবে আটকে যেতে পারে।