Thursday, October 23, 2025

ইউনূস কারিশমায় ধ্বংসের পথে দেশের জ্বালানি খাত

Share

বাংলাদেশের জ্বালানি খাত, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মেরুদণ্ড হিসেবে বিবেচিত, বর্তমানে তেল চুরি, ঘুষ বাণিজ্য, এবং সুশাসনের অভাবে গভীর সংকটে নিমজ্জিত। ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে এই সংকট আরও তীব্র হয়েছে, যার ফলে জাতীয় অর্থনীতি ও জনগণের আস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

জ্বালানি খাতে দুর্নীতির একাধিক ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। পেট্রোবাংলা এবং বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) থেকে হেভি ফুয়েল অয়েল (এইচএফও) এবং ডিজেল আমদানিতে বিলম্ব ও অস্বচ্ছতার কারণে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে। পাইপলাইনে তেল চুরি, গুদাম থেকে সরকারি তেল গায়েব, এমনকি তেলের সঙ্গে পানি মিশিয়ে বিক্রির মতো প্রতারণা এখন নিত্যদিনের ঘটনা। সাম্প্রতিক রিপোর্টে দেখা গেছে, ২০২৪ সালের শেষার্ধে রান্নার তেলের সরবরাহে গুরুতর ঘাটতি দেখা দিয়েছে, যা জ্বালানি খাতের অদক্ষতার প্রমাণ।

প্রশাসনিক অঙ্গনে গুঞ্জন, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান পদে নিয়োগে ১০০ কোটি টাকারও বেশি লেনদেন হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পেতে কর্মকর্তাদের কোটি কোটি টাকা ঘুষ দিতে হচ্ছে, যা পরবর্তীতে তেল বাণিজ্যে কারসাজির মাধ্যমে উদ্ধার করা হচ্ছে। একটি হোয়াইট পেপার অনুসারে, অপ্রয়োজনীয়ভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে বিলিয়ন ডলারের কিকব্যাক হয়েছে, যা জাতীয় সম্পদের লুণ্ঠনের প্রমাণ।

অগাস্ট ২০২৪-এ ড. ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হওয়ার পর জ্বালানি খাতের সমস্যা সমাধানে কোনো কাঠামোগত উদ্যোগ দেখা যায়নি। বরং, নতুন নিয়োগ এবং আমদানি চুক্তিতে অস্বচ্ছতার অভিযোগ উঠেছে। উদাহরণস্বরূপ, বিদেশি কোম্পানির সাথে অস্বচ্ছ এলএনজি চুক্তি ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং দেশের অর্থনৈতিক নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া অভিযোগে বলা হচ্ছে, ইউনুস সরকারের মন্ত্রীরা সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করছেন এবং তাদের সহযোগীদের ব্যবসায়িক প্রকল্পে দ্রুত অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে, যা দুর্নীতির নতুন চক্র সৃষ্টি করছে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের ২০২৪ করাপশন পারসেপশন ইনডেক্সে বাংলাদেশ ১৮০ দেশের মধ্যে ১৫১তম স্থানে রয়েছে, স্কোর মাত্র ২৩। এই সূচকে শক্তি খাতকে দুর্নীতির হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ড. ইউনুসের সরকার গঠনের পর এই স্কোর আরও নেমে গেছে, কারণ পুরনো সমস্যার সমাধানে কোনো কার্যকর সংস্কার দেখা যায়নি।

জ্বালানি খাতের দুর্নীতি কেবল আর্থিক ক্ষতির কারণ নয়, এটি দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভিত্তিকে ক্ষয় করছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা, বিশেষ করে ভারতীয় কোম্পানি যেমন অ্যাডানি পাওয়ার, ৪৯২ মিলিয়ন ডলারের বকেয়া অর্থ পরিশোধ না পাওয়ায় বিনিয়োগ প্রত্যাহার করছে। ইউনুস সরকারের অধীনে ৩৫৩টি কারখানা বন্ধ হয়েছে, যা লক্ষ লক্ষ শ্রমিককে বেকার করেছে এবং জ্বালানি সরবরাহের চাপ বাড়িয়েছে। এই পরিস্থিতি সামাজিক অস্থিরতা বাড়াচ্ছে এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি তৈরি করছে।

একজন জ্বালানি বিশ্লেষক বলেন, “তেল খাতে দুর্নীতি মানে রাষ্ট্রীয় সম্পদের সরাসরি লুণ্ঠন। জনগণের করের টাকায় কেনা তেল যদি চুরি হয় বা পানিতে মিশে বিক্রি হয়, তাহলে এর দায় গোটা প্রশাসনের।” ড. ইউনুসের সরকার এই দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছে, যা তাদের অদক্ষতার প্রমাণ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, জ্বালানি খাতকে দুর্নীতির জাল থেকে মুক্ত করতে অবিলম্বে কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন। নিয়োগ, আমদানি চুক্তি, এবং বিতরণে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর বিচার নিশ্চিত করা ছাড়া বিকল্প নেই। তবে, ড. ইউনুসের নেতৃত্বে এমন কোনো দৃঢ় উদ্যোগ দেখা যায়নি। উল্টো, তিনি নিজেও গ্রামীণ টেলিকম থেকে ২৫২ মিলিয়ন টাকার দুর্নীতির অভিযোগের মুখে রয়েছেন, যা সরকারের সংস্কারের প্রতিশ্রুতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

জ্বালানি খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। এটি কেবল অর্থনৈতিক সাশ্রয় নয়, বরং রাষ্ট্রীয় সততা ও জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারের প্রশ্ন। ড. ইউনুসের সরকারের প্রতি জনগণের প্রত্যাশা ছিল সুশাসন ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি জাতিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। জনগণ এখন দাবি করছে: অবিলম্বে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, এবং কঠোর সংস্কার!

আরো পড়ুন

সদ্য প্রকাশিত