Share
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর তাজাম্মুল হক যখন বলেন “কালী পূজা তো উত্তর ভারতের পূজা”, তখন আসলে কী বলতে চাইছেন উনি? বাংলাদেশে কালীপূজা শত শত বছর ধরে হয়ে আসছে, এটা তো কোনো নতুন আমদানি করা জিনিস না। নাকি উনার মাথায় আছে যে এদেশের হিন্দুরা আসলে ভারতীয়, তাই তাদের পূজাও ভারতীয়? এই যে মানসিকতা, এটা কোত্থেকে আসলো? আর ভাইস চ্যান্সেলর রেজাউল করিম সাহেব বলছেন “নতুন পূজার ট্রাডিশন শুরু করা যাবে না”। মানে বুঝলাম না, ক্যাম্পাসে কি আগে থেকেই পূজা হতো না, নাকি হিন্দু ছাত্রছাত্রীরা এতদিন পূজা না করেই টিকে ছিলো?
ব্যাপারটা পরিষ্কার। জুলাই মাসে যারা রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে দেশটাকে আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছিল, যারা শত শত তরুণের লাশের ওপর দাঁড়িয়ে ক্ষমতায় এসেছে, তারা এখন আসল রঙ দেখাচ্ছে। মুহাম্মদ ইউনুস নোবেল পুরস্কার আর গরিবদের উন্নয়নের কথা বলে বিদেশে বাংলাদেশকে পোভার্টি পর্নে কাষ্ট করে ভালোই কামিয়েছেন। কিন্তু দেশের ভেতরে কী করেছেন? গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে গরিব মানুষের কাছ থেকে এমন সুদ নিয়েছেন যা শুনলে সুদী মহাজনরাও লজ্জা পাবে। আর এখন এসে দেশ চালাচ্ছেন কার টাকায়? কোন বিদেশি প্রভুর ইশারায়? সামরিক বাহিনীর ছত্রছায়ায় বসে থেকে কাদের হয়ে কাজ করছেন?
জামায়াতে ইসলাম। এই নামটা শুনলেই বাংলাদেশের মানুষের গা শিউরে ওঠার কথা। একাত্তরে যারা পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে মিলে এদেশের মানুষ মেরেছে, ধর্ষণ করেছে, বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে, তারা এখন খোলামেলা ঘুরে বেড়াচ্ছে। শুধু তাই না, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে তাদের লোক বসানো হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনে তাদের মতাদর্শের মানুষ দিয়ে ভরে ফেলা হচ্ছে। আর তারপর এমন সব ঘটনা ঘটছে যা আগে কল্পনাও করা যেত না।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাটা একটা উদাহরণ মাত্র। সারাদেশে মন্দিরে হামলা হচ্ছে, পূজামণ্ডপ ভাঙা হচ্ছে, হিন্দু পরিবারগুলো আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। কেউ মুখ খুলছে না, কারণ খুললে কী হবে? পুলিশ কি এসে রক্ষা করবে? প্রশাসন কি ব্যবস্থা নেবে? উল্টো যারা অভিযোগ করতে যায়, তাদেরকেই হয়রানি করা হয়। এটা কোন দেশ হলো? মুক্তিযুদ্ধ করে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের জন্য লড়াই করা হয়েছিল, নাকি এমন একটা দেশের জন্য যেখানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা নিজের বাড়িতে বসে পূজা করতে পারবে না?
প্রথমে মৌখিক অনুমতি দিয়ে পরে নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে সেটা তুলে নেওয়া। এই নিরাপত্তা সমস্যা কোত্থেকে এলো? মুসলিম ছাত্রছাত্রীরা কি আপত্তি করেছে? তারা তো বরং সমর্থন দিচ্ছে, একসাথে দাঁড়িয়েছে। তাহলে সমস্যাটা কার? যারা সাম্প্রদায়িক বিভাজন চায়, যারা হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা বাঁধিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চায়, তাদের। আর সেই কাজটা করছে জামায়াত ও তাদের দোসররা ইউনুস সরকারের ছত্রছায়ায় বসে।
দেশটা কোন দিকে যাচ্ছে, সেটা কি কেউ ভাবছে? নির্বাচিত সরকারকে সরিয়ে, গণতন্ত্রকে পদদলিত করে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে মাটিতে মিশিয়ে দিয়ে এখন চলছে একটা অঘোষিত সাম্প্রদায়িক প্রকল্প। আর এই প্রকল্পের মূল কারিগর হচ্ছে জামায়াতে ইসলাম, যাদের হাত দিয়ে ইউনুস ও তার বিদেশি প্রভুরা দেশটাকে নিয়ন্ত্রণ করছে। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি আজ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জার আর কী হতে পারে?
আরো পড়ুন