নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশে একের পর এক ঘটছে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। সেই সঙ্গে বেসরকারি শিক্ষকদের আন্দোলনে স্থবির হয়ে পড়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এক কথায় একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশ।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভোট বানচালে দেশে এ ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে। সেইসঙ্গে পাহাড়, বন্দর, করিডরকে আমেরিকার কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া থেকে জনগণের চোখ সরাতে এই আয়োজন।
সবশেষ ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো সেকশনে আগুনের ঘটনা ঘটে। কার্গো নিরাপত্তায় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পাওয়া ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এই ঘটনা নিছক দুর্ঘটনা নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১০০ কোটি টাকার বেশি হতে পারে বলে অনুমান করছেন তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র নেতারা। এ ঘটনায় তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
রোববার (১৯ অক্টোবর) ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসে আগুন লাগে। প্রায় ২ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
এর আগে চট্টগ্রাম ইপিজেডের একটি কারখানায় আগুন লাগে, যা টানা ১৭ ঘণ্টা জ্বলার পর নিয়ন্ত্রণে আসে। একই দিন রাতে টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে একটি সূতার মিলে অগ্নিকাণ্ডে কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়।
এছাড়া, গত ১৪ অক্টোবর ঢাকার মিরপুরের রূপনগরে একটি কেমিক্যাল গোডাউন এবং পোশাক কারখানায় আগুন লাগে। এই ঘটনায় ১৬ জন মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারান।
এমন প্রেক্ষাপটে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে এখনো ষড়যন্ত্র চলছে। এই নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। এই নির্বাচনকে আপনারা হালকা করে দেখার কোন সুযোগ নেই। তাই এই নির্বাচনকে নিয়ে এখনো ষড়যন্ত্র চক্রান্ত অব্যাহত আছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন, দেশে বিমানবন্দরসহ নানা স্থানে অগ্নিকাণ্ড ঘটছে; মানুষেরও নিরাপত্তা নেই। এমন পরিস্থিতিতে কীভাবে আগামী ফেব্রুয়ারিতে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে’?
এদিকে বাড়িভাড়া বাড়ানোসহ তিন দাবিতে আন্দোলনরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের হুঁশিয়ার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহসভাপতি (ভিপি) আবু সাদিক কায়েম। যদিও সরকার এরইমধ্যে শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা মূল বেতনের ৫ শতাংশ হারে বাড়িয়েছে। এছাড়া জামায়াত নির্বাচনের কয়েক মাস বাকি থাকলেও এখনও পিআর পদ্ধতির জন্য যুগপৎ আন্দোলন ধরে রেখেছে। এসব মিলিয়ে পরিস্থিতি দিনের পর দিন আরও জটিল হচ্ছে।
কয়েক দিন আগেই জামায়াতের আইনজীবী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘এ সপ্তাহের মধ্যে বেশ অনেকগুলো ঘটনা ঘটবে। আজকে এ ব্যাপারে কিছু বলতে চাচ্ছি না।’ বিশ্লেষকদের মতে, তাজুলের কথাতেও দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র স্পষ্ট। কারণ এরপরই এসব আগুনের ঘটনা ও আন্দোলন শুরু হয়।
এরইমধ্যে জুলাই আন্দোলনের সমন্বয়কদের নিয়ে গড়া দল এনসিপিকে রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক করে তোলা হচ্ছে। কথিত জুলাই সদন অনুষ্ঠানে তাদের ডাকা হয়নি। পাশাপাশি তাদের প্রতীক নিয়েও হযবরল অবস্থা তৈরি হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষক জিল্লুর রহমান বলেছেন, প্রয়োজন শেষে রূপ বদলালেন ড. ইউনূস। জুলাই অভ্যুত্থানের সামনে দাঁড়ানো যুবকদের দাবি ছিল জুলাই সনদ। অথচ জুলাই সনদ অনুষ্ঠানে তারা অনুপস্থিত ছিল। এক বছর ধরে তাদের কথাই এগিয়ে আনা হয়েছিল এই সনদ। তবু শেষ মুহূর্তে তাদের ছাড়া সনদে স্বাক্ষর হলো।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ সব ঘটনা গুরুত্বপূর্ণ কিছু থেকে জনদৃষ্টি সরানোর জন্য কোনো ‘ডাইভারশনারি ট্যাকটিক্স’। বারবার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আগুন এবং শিক্ষকদের আন্দোলনকে উস্কে দেওয়া মাধ্যমে দেশে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। যাতে পশ্চিমা মোড়ল দেশ আমেরিকার ডিপস্টেটের প্রভাব আরও বেশিদিন স্থায়ী হয়। আর পুরো বিষয়টিকে দেখভাল করছেন ইউনূস।
