Sunday, October 26, 2025

৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ বীরাঙ্গনাকে অপমান করলেন রাজাকারপুত্র মির্জা ফখরুল

Share

নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ বীরাঙ্গনার ত্যাগ ও আত্মত্যাগ দেশের প্রতিটি নাগরিকের হৃদয়ে গভীর শ্রদ্ধার স্থান দখল করে আছে। কিন্তু এই মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদ ও বীরাঙ্গনাদের প্রতি অবমাননাকর মন্তব্য করে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শনিবার (২৫ অক্টোবর, ২০২৫) রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে দৈনিক নয়া দিগন্ত-এর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে তিনি একটি বিতর্কিত মন্তব্য করেন, যা দেশের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি করেছে।

অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল বলেন, “নিজামী সাহেব, কামারুজ্জামান সাহেব ও মীর কাসেম আলী সাহেব—এই পত্রিকার যিনি প্রকাশক ছিলেন—তাঁদেরসহ অনেককেই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে, সালাউদ্দিন সাহেবসহ। মিথ্যা মামলায়।” এই বক্তব্যে তিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়া যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে কথা বলেন, যা মুক্তিযুদ্ধের শহীদ ও বীরাঙ্গনাদের প্রতি চরম অসম্মান প্রদর্শন করেছে বলে বিবেচিত হচ্ছে। এই মন্তব্যে তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে ‘মিথ্যা মামলা’ হিসেবে উল্লেখ করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের প্রতি একটি বিতর্কিত অবস্থান প্রকাশ করেছেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রায়ই নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দাবি করে আসছেন। তবে তার এই দাবি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, কারণ তার বাবা মির্জা রুহুল আমিন ছিলেন একজন তালিকাভুক্ত যুদ্ধাপরাধী। যুদ্ধাপরাধীদের তালিকায় মির্জা রুহুল আমিনের নাম ৭১০ নম্বরে উল্লেখিত ছিল। এই প্রেক্ষাপটে ফখরুলের সাম্প্রতিক মন্তব্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও শহীদদের প্রতি অসম্মানজনক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তার এই বক্তব্যকে অনেকে যুদ্ধাপরাধীদের প্রতি সমর্থন এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের বিরুদ্ধে অবস্থান হিসেবে দেখছেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী হিসেবে যুদ্ধাপরাধীদের অপরাধ সারা বিশ্বে স্বীকৃত। তাদের বিচারের মাধ্যমে বাংলাদেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে ফখরুলের মন্তব্য শুধু মুক্তিযুদ্ধের শহীদ ও বীরাঙ্গনাদের প্রতি অসম্মানই নয়, বরং দেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের প্রতি একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এই ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ব্যক্তি ও সংগঠনগুলো ফখরুলের এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। অনেকে বলছেন, এই ধরনের মন্তব্য মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করার প্রচেষ্টা এবং যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার প্রকাশ। সাধারণ মানুষের মধ্যেও ক্ষোভ ও হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে।

মির্জা ফখরুলের এই বক্তব্য কেবল তার ব্যক্তিগত অবস্থানকেই প্রশ্নের মুখে ফেলেনি, বরং বিএনপির মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি অঙ্গীকার নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এই বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি উঠেছে। অনেকে মনে করছেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে অসম্মান করার মতো এই ধরনের মন্তব্যের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। এই ঘটনা বাংলাদেশের মানুষের মনে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করেছে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে।

আরো পড়ুন

সদ্য প্রকাশিত