Sunday, October 26, 2025

নিজের আখের গোছানো প্রায় শেষের দিকে, এবার ভাইকে প্রশাসক বানালেন প্রেস সচিব

Share

নিজস্ব প্রতিবেদক
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যেই তার ছোট ভাই ড. আবু নছর মোহাম্মদ আব্দুল্লাহকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই নিয়োগকে ঘিরে প্রশাসনে তীব্র আলোচনা ও সমালোচনা চলছে, কারণ এটিকে প্রভাব খাটিয়ে পারিবারিক স্বার্থ রক্ষার একটি উদাহরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক হিসেবে ড. আবু নছর মোহাম্মদ আব্দুল্লাহকে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। তিনি স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিকল্পনা অধিশাখা–১ এর যুগ্ম সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এখন তিনি নাসিক প্রশাসকের দায়িত্বও অতিরিক্তভাবে পালন করবেন। ড. আব্দুল্লাহ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের আপন ছোট ভাই। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় (এলজিআরডি) থেকে গত ১ সেপ্টেম্বর জারি করা এক অফিস আদেশে ড. আব্দুল্লাহর নিয়োগ দেওয়া হয়। সেপ্টেম্বরের শুরুতে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

ড. আব্দুল্লাহর আগে নাসিক প্রশাসক ছিলেন এএইচএম কামরুজ্জামান। তিনি সম্প্রতি পদোন্নতি পেয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে যোগ দেন। ‘প্রাচ্যের ড্যান্ডি’ নামে পরিচিত নারায়ণগঞ্জ দেশের বৃহত্তম নদীবন্দর এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র। এই অঞ্চলের প্রশাসক পদটি অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক এবং প্রভাবশালী বলে বিবেচিত হয়।

অভিযোগ উঠেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের অংশ হয়ে ব্যাপক লুটপাট করেছেন শফিকুল আলম। সাংবাদিক বিভূরঞ্জন সরকার হত্যারও মূলহোতা তিনি বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রভাব খাটিয়ে এবার ভাইকে প্রশাসক বানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের মতো গুরুত্বপূর্ণ জেলায়। এই নিয়োগকে ঘিরে প্রশাসনে আলোচনা তৈরি হয়েছে, কারণ তিনি প্রেস সচিব শফিকুল আলমের আপন ছোট ভাই।

দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সম্প্রতি আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে নিয়োগ পাওয়া লিয়াকত আলী মোল্লাও প্রেস সচিবের ঘনিষ্ঠজন। তাদের দুজনই মাগুরার একই গ্রামের বাসিন্দা। নিয়োগের আগে মাগুরা সমিতির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ড. আব্দুল্লাহ ও লিয়াকত আলীকে একসঙ্গে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে।

এরইমধ্যে সরকারের অংশ হয়ে শফিকুল আলম ব্যাপক দুর্নীতি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তার প্রভাবে পারিবারিক ও ঘনিষ্ঠজনদের উচ্চপদে নিয়োগ দেওয়ার এই ঘটনা প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। সমালোচকরা বলছেন, এটি অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে ক্ষমতার অপব্যবহারের একটি উদাহরণ। এই নিয়োগের ফলে নারায়ণগঞ্জের উন্নয়ন কার্যক্রমে প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এই ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকে দাবি করছেন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এই অভিযোগগুলো তদন্ত করতে হবে। শফিকুল আলমের বিরুদ্ধে উঠা লুটপাট ও হত্যার অভিযোগগুলো যদি সত্য হয়, তাহলে এটি সরকারের ভাবমূর্তির জন্য বড় ধরনের আঘাত। প্রশাসনের সূত্রগুলো জানায়, এই ধরনের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের হস্তক্ষেপ বাড়ছে, যা সরকারি নিয়োগের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

এই নিয়োগের পরিপ্রেক্ষিতে নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তারা বলছেন, প্রশাসক নিয়োগে যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে হওয়া উচিত, পারিবারিক সম্পর্কের ভিত্তিতে নয়। এই ঘটনা অন্তর্বর্তী সরকারের স্বচ্ছতা নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে এবং দুর্নীতির অভিযোগগুলোর তদন্তের দাবি উঠেছে।

আরো পড়ুন

সদ্য প্রকাশিত