Monday, October 13, 2025

শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে তৃণমূল বিএনপির নেতা-কর্মীদের ভয়াবহ চাঁদাবাজি, উৎসাহ দিচ্ছে কেন্দ্র

Share

নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবারও দেখা যাচ্ছে পুরনো অসুখ দলীয় প্রভাব, চাঁদাবাজি ও তদবীরবাজির রাজনীতি। এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা এখন নতুন মাত্রা পেয়েছে বিএনপির ভেতরে। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের তিন নেতা মির্জা আব্বাস, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং সালাহ উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও তদবিরবাজির একাধিক অভিযোগ উঠেছে।

ব্যবসায়ী, ঠিকাদার ও প্রশাসনিক সূত্রগুলোর দাবি এই নেতারা নিজেদের রাজনৈতিক প্রভাব ও তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠতা কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন খাতে অর্থ বাণিজ্য, কমিশন আদায় ও নিয়োগ তদবীরে গভীরভাবে জড়িয়ে পড়েছেন।

সূত্র জানায়, মির্জা আব্বাস, যিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠজন, তিনি রাজধানী ও কক্সবাজার অঞ্চলে নগর ভবন, গণপূর্ত, রাজউক ও ব্যাংক পাড়া পর্যন্ত প্রভাব বিস্তার করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি ও তার অনুসারীরা জমি দখল, কলকারখানা দখল, উন্নয়ন প্রকল্পে কমিশন বাণিজ্য ও চাঁদা আদায়ের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।

চট্টগ্রামে খসরু–সালাহ উদ্দীনের কমিশন সাম্রাজ্য
অন্যদিকে, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহ উদ্দিন আহমেদ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে হোটেল, পর্যটন, ভূমি ও সামুদ্রিক ব্যবসা খাতে তদবীর ও কমিশন বাণিজ্যে সক্রিয় বলে জানা গেছে। এমনকি সরকারি গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ, ব্যবসায়িক অনুমোদন ও লাইসেন্স প্রক্রিয়ায়ও তাদের প্রভাব খাটানোর অভিযোগ উঠেছে।

বিএনপির শীর্ষ নেতা তারেক জিয়ার ঘনিষ্ঠতার পরিচয় ব্যবহার করে কিছু প্রভাবশালী নেতা এখন শুধু টাকা বানানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। রাজনীতি নয়, এখন তাদের লক্ষ্য ব্যক্তিগত সম্পদ বৃদ্ধি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিএনপির ভেতরে আদর্শ নয়, বরং অর্থ ও ক্ষমতার লড়াই এখন প্রকট। মাঠপর্যায়ের নেতারা উপেক্ষিত, আর শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা রাজনীতির আড়ালে চাঁদাবাজি ও তদবীরবাজিকে পেশায় পরিণত করেছেন।

যে দল নিজেদের ‘গণতন্ত্র উদ্ধার মিশন’-এর নামে প্রচার করছে, সেই দলের নেতারা যদি জনগণের ঘামঝরা অর্থ লুটে ব্যক্তিগত সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন, তবে তা কেবল দলের জন্য নয় দেশের রাজনীতির জন্যও অশনি সংকেত। দেশের অর্থনীতি এমনিতেই টালমাটাল অবস্থায়, সেখানে রাজনৈতিক দুর্নীতি ও দখলদারিত্ব যোগ হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।

মাঠ পর্যায়ে পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলকে অনেকেই এখন ‘চাঁদাবাজ দল’ হিসেবে উল্লেখ করছেন। রাজনীতির এই অবক্ষয় জনগণের মধ্যে বিরক্তি ও হতাশা সৃষ্টি করছে। সম্প্রতি বরিশাল ২ আসনের বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী সরফুদ্দিন আহম্মেদ সান্টু বলেন, গত ১ বছর ছোট খাটো চাঁদাবাজি আমরা ইচ্ছে করেই হইতে দিছি কারণ ১৭ বছর আমার নেতা-কর্মীরা কিছু খায় নাই। অর্থাৎ বিএনপি ক্ষমতায় আসলে তারা চাঁদাবাজি আরও বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে।

বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপির বর্তমান সংকট দলের নিজস্ব নেতৃত্বের অযোগ্যতা ও লোভের প্রতিফলন। যখন একটি দল আন্দোলনের নামে জনগণের আবেগকে ব্যবহার করে আর ভিতরে বসে চাঁদাবাজি ও কমিশন ব্যবসা চালায়, তখন সেই দলের গণআস্থা পুনরুদ্ধার প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এই চর্চা অব্যাহত থাকলে বিএনপি কেবল রাজনৈতিকভাবে নয়, নৈতিক ও সংগঠনগতভাবেও ধ্বংসের মুখে পড়বে।

Read more

Local News