Wednesday, October 22, 2025

সেনা বাহিনীকে রাজনীতির হাতিয়ার করে ভোটবিহীন ক্ষমতা দখলের মঞ্চ সাজাচ্ছে ইউনুস

Share

বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আবারও অস্থিরতার ছায়া ঘনিয়ে এসেছে। জাতি যখন গণতান্ত্রিক ধারার পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রত্যাশায়, তখন সরকারের ভেতর থেকে উঠে আসছে এমন সংকেত—যা জনভোট ও জনগণের অংশগ্রহণকে উপেক্ষা করে একতরফা ক্ষমতা কুক্ষিগত করার ইঙ্গিত দিচ্ছে। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অঙ্গনের আলোচনায় স্পষ্ট হচ্ছে, ইউনুস সরকার আওয়ামী লীগকে নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে বাদ দিয়ে এক “নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র” প্রতিষ্ঠার পথে হাঁটছে।

রাজনৈতিক মহলের মূল্যায়ন বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, বৈষম্যবিরোধী কিছু ছাত্রনেতা, সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের একাংশ, অবসরপ্রাপ্ত কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা ও কিছু বাম নেতা মিলে একটি “সম্মিলিত ক্ষমতাসীন জোট” গঠনের চেষ্টা চলছে।

এই জোটের মাধ্যমে নির্বাচনের আগেই আসন ভাগাভাগি ও জয়ের ভাগ নির্ধারণ করা হবে। ভোটগ্রহণ কেবলমাত্র একটি আনুষ্ঠানিকতা হিসেবে সম্পন্ন হবে, যাতে আন্তর্জাতিক মহলের কাছে নির্বাচনের একটি বৈধ মুখোশ দেখানো যায়।

অভিযোগ আছে, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনকে সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে এনে এই “প্রাকনির্ধারিত ভোটযুদ্ধ” বাস্তবায়নের প্রস্তুতি চলছে। এমন একটি ছক বাস্তবায়িত হলে তা কেবল গণতন্ত্রকেই নয়, রাষ্ট্রের মূল কাঠামোকেও বিপন্ন করবে।

আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো এই পুরো প্রক্রিয়ায় সেনা বাহিনীকে ব্যবহার করার নকশা। দেশের অভ্যন্তরে সেনা সদস্যদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক মামলা, বদলি ও পদচ্যুতির ঘটনাগুলো এখন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের অংশ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে।

অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, অবসরপ্রাপ্ত কয়েকজন প্রভাবশালী কর্মকর্তা ও সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের কয়েকজন সদস্য সেনা বাহিনীর ভেতরে বিভাজন সৃষ্টি করে ইউনুস সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সফল করতে চাইছেন।

লক্ষ্য স্পষ্ট সেনাবাহিনীকে “নির্বাচনী নিরাপত্তার” নামে এমন এক অবস্থানে নেওয়া, যেখানে তাদের বাধ্য করা যাবে পূর্বনির্ধারিত ফলাফল কার্যকর করতে। এই প্রক্রিয়াকে অনেক বিশ্লেষক বলছেন মেটিকুলাস ডিজাইন অব কন্ট্রোল” অর্থাৎ রাষ্ট্রের সবচেয়ে শৃঙ্খলাপূর্ণ বাহিনীকে রাজনীতির যন্ত্রে পরিণত করার কৌশল।

সাম্প্রতিক সময়ে সেনা সদস্যদের বিরুদ্ধে যে মামলা, গ্রেফতার ও পদচ্যুতির ঘটনা বেড়েছে, তা নিছক প্রশাসনিক নয় বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। বরং এর লক্ষ্য, সেনা বাহিনীর ভেতরে ভয়, বিভ্রান্তি ও আত্মসমর্পণের মানসিকতা সৃষ্টি করা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে, ভবিষ্যতে সরকারবিরোধী যে কেউ তিনি সেনা কর্মকর্তা, আমলা বা সাধারণ নাগরিক—তার বিরুদ্ধে “রাষ্ট্রবিরোধিতা”র অভিযোগ তুলে আইনি সন্ত্রাস চালানো হবে। এভাবেই ধাপে ধাপে সেনা বাহিনীকে “জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী” থেকে “রাজনৈতিক আদেশ পালনকারী বাহিনী”-তে রূপান্তর করার প্রক্রিয়া চলছে।

বাংলাদেশের রাজনীতি প্রমাণ করেছে জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো ক্ষমতা স্থায়ী হয় না। ১৯৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৯০-এর গণআন্দোলন কিংবা ২০০৮-এর জনসমর্থন প্রতিটি অধ্যায়েই জনগণের ভোটই ছিল পরিবর্তনের মূল শক্তি। কিন্তু আজ যখন আওয়ামী লীগ দেশের সবচেয়ে বৃহৎ ও ঐতিহাসিক দল কে বাইরে রেখে নির্বাচনের আয়োজনের চেষ্টা হচ্ছে, তখন প্রশ্ন জাগে: এই নির্বাচন কতটা বৈধ, কতটা গ্রহণযোগ্য?

আওয়ামী লীগ কেবল একটি রাজনৈতিক দল নয়; এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা, উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতার প্রতীক। সেই দলকে নিষিদ্ধ বা অবরুদ্ধ রেখে “গণতন্ত্র” চালানোর চেষ্টাই আসলে গণতন্ত্রকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেওয়া।

বাংলাদেশের জনগণ অতীতেও প্রমাণ করেছে তারা চুপচাপ অন্যায় মেনে নেয় না। আজও জাতি এক সংকটময় মোড়ে দাঁড়িয়ে। ইউনুস সরকারের নির্বাচনী পরিকল্পনা, সেনা বাহিনীকে রাজনীতির মঞ্চে টেনে আনার অপচেষ্টা, আর ভোটবিহীন বৈধতার নাটক সবই রাষ্ট্রের অস্তিত্ব ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যতের জন্য বিপজ্জনক সংকেত।

এখন প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য, সংলাপ ও জনগণের অংশগ্রহণভিত্তিক সমাধান। সেনা বাহিনীকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র থেকে মুক্ত রাখা এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়াই এখন সময়ের দাবি। জনগণের ভোটই হোক ক্ষমতার উৎস এই অঙ্গীকার ভুলে গেলে রাষ্ট্র শুধু অস্থিতিশীলই নয়, ইতিহাসের অন্ধকার অধ্যায়েও হারিয়ে যাবে।

আরো পড়ুন

সদ্য প্রকাশিত