Share
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সাম্প্রতিক ঘোষণাটি শুনে যে কারও মাথায় হাত পড়ে যাবার কথা। জাতীয় প্রতিরক্ষা জোরদারের নামে ৮৮৫০ জন যুবক-যুবতীকে কারাতে, জুডো, তায়কোয়ান্ডো এবং আগ্নেয়াস্ত্রের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা। শুনতে হয়তো দেশপ্রেমের কথা মনে হতে পারে, কিন্তু যখন এই ঘোষণা আসছে একটি অবৈধ সরকারের পক্ষ থেকে, যারা জুলাই মাসে সহিংসতা আর দাঙ্গার মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে, তখন এই প্রশিক্ষণের আসল উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলা ছাড়া উপায় থাকে না।
জুলাই মাসে যা হয়েছিল সেটা কোনো স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন ছিল না। সেটা ছিল সুপরিকল্পিত একটি নাশকতা, যেখানে বিদেশি অর্থায়ন, জঙ্গি সংগঠনের সহযোগিতা এবং কিছু সামরিক ব্যক্তিত্বের মদদ ছিল। রাস্তায় রক্ত ঝরেছে, সাধারণ মানুষ মারা গেছে, সম্পত্তি ধ্বংস হয়েছে। আর সেই বিশৃঙ্খলার সুযোগে নির্বাচিত একটি সরকারকে ক্যু করে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন সেই একই দাঙ্গাবাজরা ক্ষমতায় বসে তাদের ক্যাডার বাহিনীকে অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিতে চাইছে।
মুহাম্মদ ইউনূস যাকে বলা হচ্ছে এই অবৈধ সরকারের প্রধান, তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন অনেক দিনের। সুদী মহাজনি ব্যবসার মাধ্যমে গরিব মানুষকে আরও গরিব করার পাশাপাশি তিনি এবার দেশের রাজনৈতিক ময়দানে নেমে পড়েছেন। কিন্তু কোনো গণতান্ত্রিক পথে নয়, সহিংসতা আর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে। তার সাথে আছে আসিফ ভূঁইয়ার মতো জুলাইয়ের সন্ত্রাসীরা, যারা এখন সরকারের মন্ত্রীর চেয়ারে বসে দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে খেলছে।
এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচির নামে আসলে কী করা হচ্ছে সেটা বোঝা কঠিন নয়। দেশের সাত টি কেন্দ্রে প্রায় নয় হাজার যুবক-যুবতীকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ বিভিন্ন ধরনের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রশ্ন হলো, কেন? দেশে কি কোনো যুদ্ধ চলছে? নাকি এই অস্ত্র প্রশিক্ষিত বাহিনী দিয়ে জনগণের ওপর আরেকটি সহিংস আক্রমণের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে? জুলাই মাসে যেভাবে সাধারণ মানুষের ওপর হামলা হয়েছিল, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল, সেই একই কায়দায় কি আবার আক্রমণ করার জন্য একটি সুশিক্ষিত বাহিনী তৈরি করা হচ্ছে?
এটা কোনো স্বাভাবিক সরকারি কার্যক্রম নয়। একটি বৈধ সরকার যদি জাতীয় প্রতিরক্ষা নিয়ে চিন্তিত হয়, তাহলে সেটা করবে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে, প্রতিষ্ঠিত প্রতিরক্ষা কাঠামোর মধ্যে থেকে। কিন্তু যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আগ্নেয়াস্ত্রের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ঘোষণা শুনলে যে কেউ বুঝবে এখানে অন্য কোনো এজেন্ডা কাজ করছে। এটা দেশরক্ষা নয়, এটা একটি রাজনৈতিক মিলিশিয়া বাহিনী গঠনের চেষ্টা।
যারা জুলাইয়ের দাঙ্গায় অংশ নিয়েছিল, যারা পুলিশ, সাধারণ মানুষ এবং সরকারি সম্পত্তির ওপর হামলা করেছিল, তাদের অনেককেই এখন বীর হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। তাদের হাতেই এখন তুলে দেওয়া হতে পারে আগ্নেয়াস্ত্রের প্রশিক্ষণ। এই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যুবকরা যদি আবার কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়, তাহলে দেশে আরেকটি রক্তক্ষয়ী সংঘাতের সম্ভাবনা তৈরি হবে। আর সেই দায় কার ওপর পড়বে? যারা এই অস্ত্র প্রশিক্ষণের অনুমোদন দিচ্ছে, তাদের ওপরই।
জুলাইয়ের ঘটনার পর থেকেই পরিষ্কার যে এই অবৈধ সরকারের সাথে জঙ্গি মতাদর্শের কিছু গোষ্ঠীর যোগসাজশ আছে। দেশে ধর্মীয় জঙ্গিবাদ আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। এমন পরিস্থিতিতে হাজার হাজার যুবককে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত অত্যন্ত বিপজ্জনক। এই প্রশিক্ষিত যুবকরা কোন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হবে সেটা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। তারা কি সত্যিই দেশ রক্ষা করবে, নাকি তাদের ব্যবহার করা হবে ভিন্নমতাবলম্বীদের দমন করতে?
এই পুরো পরিকল্পনাটি একটি গণতান্ত্রিক দেশের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। একটি নির্বাচিত সরকারকে ক্যু করে ক্ষমতায় আসা লোকেরা এখন দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে নিজেদের মতো করে সাজাতে চাইছে। তারা জাতীয় প্রতিরক্ষার নামে আসলে নিজেদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে চাইছে। এটা দেশের জন্য ভয়ংকর একটি পরিস্থিতি।
জুলাই মাসের রক্তাক্ত ঘটনার পরে আবারও অস্ত্র প্রশিক্ষণের ঘোষণা দেশের মানুষের কাছে একটি পরিষ্কার সংকেত। এই অবৈধ সরকার দেশকে আরও অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিতে চাইছে। আর এই ঘোষণা যতটা না জাতীয় প্রতিরক্ষার জন্য, তার চেয়ে বেশি নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য। দেশের মানুষ এখন দেখছে, বুঝছে এবং মনে রাখছে কারা কীভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করছে।
আরো পড়ুন