Share
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আমেরিকার কাছে চট্টগ্রাম বন্দর ও সেন্টমার্টিন খুব শিগগিরই হস্তান্তর করতে যাচ্ছেন। সূত্র বলছে, এ সংক্রান্ত সব আনুষ্ঠানিকতা এরইমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনেও এই পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে গেছে।
সম্প্রতি সেন্টমার্টিন দ্বীপে ভ্রমণে নতুন নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। এতে বলা হয়, পর্যটকদের অবশ্যই বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড থাকবে, কিউআর কোড না থাকলে টিকিট নকল হিসেবে গণ্য হবে।
ভ্রমণের সময়সূচি ও পর্যটক উপস্থিতি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে উল্লেখ করে এতে আরও জানানো হয়েছে, প্রতিদিন গড়ে দুই হাজারের বেশি পর্যটক দ্বীপে ভ্রমণ করতে পারবেন না। নভেম্বর মাসে পর্যটকরা শুধুমাত্র দিনে ভ্রমণ করতে পারবেন, তবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে রাত্রিযাপনের অনুমতি থাকবে।
ফেব্রুয়ারিতে পর্যটক যাতায়াত সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে, জানানো হয়েছে প্রজ্ঞাপনে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, পর্যটকদের সেন্টমার্টিন যাওয়া নিরুৎসাহিত করতে এমন কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গোপসাগরে নিজেদের উপস্থিতি প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য নিয়ে “ কোয়াড পোর্টস ফর ফিউচার” কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশে একটি বন্দর ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে। এ উদ্যোগ মূলত এ অঞ্চলে চীনের প্রভাবকে কমাতে করা হচ্ছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এই সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ঢাকায় সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে প্রাথমিক বৈঠক করেছে। সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে একটি সম্ভাব্যতা যাচাই করবে, এরপরই বন্দর নির্মাণ বা উন্নয়নের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেবে। এরইমধ্যে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ চট্টগ্রাম এলাকায় বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক তৎপরতা রয়েছে।
এদিকে আমেরিকাভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ঠিকানার প্রতিবেদনে বলা হয়, ভূ-রাজনৈতিক ও সামরিক দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থানগত গুরুত্ব দ্রুত বাড়ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন এশিয়া-আফ্রিকায় প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। চীনের নৌসামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে।
বাংলাদেশের সেন্টমার্টিন দ্বীপকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে নৌঘাঁটি করার প্রস্তাব দিয়েছে। তারা ৯৯ বছরের জন্য দ্বীপের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ লিজ নিতে চায়। যদিও বাংলাদেশ সরকার মার্কিন পরিকল্পনার বিপক্ষে নয়, তবে চীন বা ভারতের বিরোধিতার ঝুঁকিও নিতে চাইছে না।
প্রথম ধাপে দ্বীপের একটি অংশ বিদেশিদের জন্য প্রমোদকেন্দ্র হিসেবে লিজ দেওয়া হতে পারে। পরবর্তী সময়ে এটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে রূপ নেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সূত্র বলছে, মিয়ানমারে চীন-সমর্থিত গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পের পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কৌশলগত অবস্থান নিতে সক্রিয় হয়েছে। রোহিঙ্গা সংকট, মানবিক করিডোর, এবং চট্টগ্রাম বন্দর—সব মিলে এই অঞ্চলটি চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিযোগিতার গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে।
এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে একটি “খ্রিস্টান রাজ্য” গঠনের ষড়যন্ত্রের আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন অনেকে, যা পূর্ব তিমুরের ঘটনার সাথে তুলনা করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সতর্ক করে বলেছিলেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের কিছু অংশ নিয়ে এমন একটি রাষ্ট্র গঠনের ষড়যন্ত্র চলছে এবং এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা বাংলাদেশে একটি এয়ার বেজ স্থাপনের মাধ্যমেও এসেছে।
একাধিক সূত্র ও বিশ্লেষকের মতে, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে এই ষড়যন্ত্রে “প্রক্সি নেতা” হিসেবে ব্যবহার করছে মার্কিন প্রশাসন। তাদের দাবি, তাঁকে জাতিসংঘ মহাসচিব করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে পশ্চিমা স্বার্থ রক্ষায় ব্যবহৃত হচ্ছে। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মিয়ানমারের বিদ্রোহীদের সহায়তা, চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পে বাধা এবং বাংলাদেশে অস্থিরতা সৃষ্টির মতো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই মুহূর্তে একটি গ্রহণযোগ্য, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে দেশের সার্বভৌমত্ব ও অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়তে পারে। ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ যেন অন্য কোনো শক্তির হাতিয়ার হয়ে না পড়ে—সেই বিষয়ে সরকারের পাশাপাশি জনগণকেও সচেতন থাকার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
আরো পড়ুন

