Share
দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের তিনটি ইউনিটই এখন বন্ধ। উত্তরাঞ্চলের আট জেলার মানুষ পুড়ছে গরমে, আর ভুগছে বিদ্যুৎ-বিভ্রাটে। কিন্তু যারা জুলাইয়ের রক্তাক্ত দাঙ্গার মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছেন, তাদের কাছে এসব সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বোধহয় খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।
ইউনুস আর তার অবৈধ সরকারের কাছে প্রশ্ন করতে ইচ্ছা করে, আপনারা যখন বিদেশি টাকায় পুষ্ট জঙ্গিদের দিয়ে রাস্তায় নৈরাজ্য সৃষ্টি করছিলেন, যখন সামরিক বাহিনীর সমর্থন নিয়ে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করছিলেন, তখন কি একবারও ভেবেছিলেন যে ক্ষমতায় এসে দেশটা চালাবেন কীভাবে? নাকি শুধু ক্ষমতার চেয়ারে বসাটাই ছিল একমাত্র লক্ষ্য?
বড়পুকুরিয়ার ৫২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উত্তরাঞ্চলের জন্য প্রাণস্বরূপ। কিন্তু এই মুহূর্তে সেখানে একটি ইউনিটও চালু নেই। ১৬ অক্টোবর থেকে ২৭৫ মেগাওয়াটের তৃতীয় ইউনিট বন্ধ, তারপর গত রোববার রাতে ১২৫ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিটও বন্ধ হয়ে গেছে। প্রধান প্রকৌশলী বলছেন, এক সপ্তাহের মধ্যে সমাধান হবে না। এক সপ্তাহ মানে আরও সাতটা দিন পার্বতীপুরের ৮০ হাজার পরিবার বিদ্যুৎহীন থাকবে, ৩২-৩৩ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ভ্যাপসা গরমে কষ্ট পাবে।
আরও মজার ব্যাপার হলো, এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের তিনটি ইউনিট একসাথে কখনো চালানোই যায়নি। ৫২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটা প্ল্যান্ট যেখানে তিনটি ইউনিট একসাথে চালু রাখতে পারেন না কর্তৃপক্ষ, সেখানে এই অবৈধ সরকার এসে কী করবে? তাদের তো কোনো পরিকল্পনাই নেই, আছে শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার মরিয়া চেষ্টা।
যে ইউনুস নোবেল পুরস্কার নিয়ে বিশ্বজুড়ে ঘুরেছেন, সুদের ব্যবসায় কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন, তিনি কি জানেন না যে একটা দেশ চালাতে হলে বিদ্যুৎ লাগে? নাকি মনে করেন যে বিদেশি প্রভুদের সমর্থন থাকলেই সব হয়ে যাবে? পার্বতীপুরের রামপুর ইউনিয়নের আবু সালেম যখন বলেন যে গরমে আর বিদ্যুৎহীনতায় সুস্থ থাকাটাই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে, তখন ইউনুসের কানে কি সেই আর্তনাদ পৌঁছায়?
জাতীয় গ্রিড থেকে যে বিদ্যুৎ আসার কথা, সেটাও আসছে না ঠিকমতো। চাহিদা ১৮ মেগাওয়াট, পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৬-৭ মেগাওয়াট। ভোল্টেজ স্থিতিশীল রাখাও সম্ভব হচ্ছে না। এই যে পুরো একটা ব্যবস্থার ভাঙন, এটা কি রাতারাতি হয়েছে? নাকি এই অবৈধ সরকারের দায়িত্বহীনতা আর অদক্ষতার ফল?
সবচেয়ে হাস্যকর ব্যাপার হলো, যারা জনগণের অধিকারের কথা বলে ক্ষমতায় এসেছিলেন, তাদের আমলেই জনগণ সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছে। ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ ছড়িয়ে, সামরিক বাহিনীর ছত্রছায়ায় যারা ক্যু করেছেন, তারা দেশ চালানোর যোগ্যতা রাখেন কিনা বড়পুকুরিয়ার এই বিদ্যুৎ সংকটই তার প্রমাণ।
প্রতিদিন ৫২০০ টন কয়লা পোড়ালে তিনটি ইউনিট চালানো যায়। কিন্তু এখন একটিও চলছে না। যান্ত্রিক ত্রুটি নাকি প্রশাসনিক ব্যর্থতা, সেটা নিয়ে অবশ্য কেউ কিছু বলছেন না। বলবেনও কীভাবে? যারা নিজেরাই অবৈধভাবে ক্ষমতায় আছেন, তারা কাকে জবাবদিহি করবেন?
উত্তরাঞ্চলের মানুষ এখন বুঝতে পারছে যে জুলাইয়ের সেই রক্তাক্ত অভ্যুত্থান আসলে তাদের জীবনে কী নিয়ে এসেছে। বিদেশি টাকা দিয়ে দাঙ্গা বাঁধানো যায়, কিন্তু সেই টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায় না। ইসলামি জঙ্গিরা পথে নামতে পারে, কিন্তু বিদ্যুৎকেন্দ্রের টারবাইন মেরামত করতে পারে না। সামরিক বাহিনী সরকার উৎখাত করতে পারে, কিন্তু ভোল্টেজ স্থিতিশীল রাখতে পারে না।
এই অ-সরকার, এই সুদখোর মহাজন যে নেতৃত্ব দিচ্ছে এই দেশের, সেটা আসলে কোনো সরকারই নয়। এটা একটা দখলদার গোষ্ঠী, যাদের একমাত্র লক্ষ্য নিজেদের ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখা। জনগণের দুর্ভোগ, উন্নয়নের মন্দা, অর্থনীতির ভাঙন – এসব তাদের চিন্তার বিষয় নয়। তাদের চিন্তা শুধু কীভাবে বিদেশি প্রভুদের খুশি রেখে আরও কিছুদিন ক্ষমতায় থাকা যায়।
বড়পুকুরিয়ার এই বিদ্যুৎ সংকট শুধু একটা প্রযুক্তিগত সমস্যা নয়। এটা এই অবৈধ সরকারের সম্পূর্ণ ব্যর্থতার প্রমাণ। আর এই ব্যর্থতার মূল্য দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। পার্বতীপুরের ৮০ হাজার পরিবার, উত্তরাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ—তারাই ভুগছে এই ক্যু সরকারের অযোগ্যতার জন্য।
আরো পড়ুন

