Tuesday, October 21, 2025

পাহাড়, বন্দর, করিডর থেকে দৃষ্টি সরাতে একের পর এক অগ্নিকাণ্ড!

Share

নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশে একের পর এক ঘটছে আগুনের ঘটনা। সবশেষ ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো সেকশনে আগুনের ঘটনা ঘটে। কার্গো নিরাপত্তায় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পাওয়া ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এই ঘটনা নিছক দুর্ঘটনা নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে জামায়াতের পৃষ্ঠপোষকতায় বট বাহিনী এ ঘটনার দায় আওয়ামী লীগের ওপর চাপাতে চাইছে। এনসিপি নেতা সারজিসও এ নিয়ে পোস্ট দিয়ে বলেছেন, এ আগুনের ঘটনা বিচ্ছিন্ন হয়। অর্থাৎ তারা এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।

তবে সূত্র বলছে, চট্টগ্রাম বন্দর ও পার্বত্য অঞ্চল দখল ও করিডর বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে আমেরিকা। এ অবস্থায় পাকিস্তান ও মার্কিন গোয়েন্দাদের তৎপরতা বেড়েছে দেশে। তাদের ইশারাতেই এ ধরনের আগুনের ঘটনা ঘটছে। এসব ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান।

শাহজালাল বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ডের আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম ইপিজেডের একটি কারখানায় আগুন লাগে, যা টানা ১৭ ঘণ্টা জ্বলার পর নিয়ন্ত্রণে আসে। একই দিন রাতে টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে একটি সূতার মিলে অগ্নিকাণ্ডে কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। এছাড়া, গত ১৪ অক্টোবর ঢাকার মিরপুরের রূপনগরে একটি কেমিক্যাল গোডাউন এবং পোশাক কারখানায় আগুন লাগে। এই ঘটনায় ১৬ জন মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারান।

কেন এই আগুন
বাংলাদেশের একটি অংশ দখলে তৎপর হয়ে উঠেছে আমেরিকা। এ লক্ষ্যে দেশটি ঘনঘন সেনাবহর, যুদ্ধবিমান ও যুদ্ধজাহাজ পাঠাচ্ছে বাংলাদেশে। আর এসব পাঠানো হচ্ছে চট্টগ্রামে। তাদের নজর বঙ্গোপসাগর ও চট্টগ্রাম বন্দরের দিকে। সেইসঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রামে তারা বানাতে চায় একটি খ্রিস্টান রাজ্য। তাদের এসব পরিকল্পনা এখন বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে। আর এ জন্যই দেশে এমন আগুনের ঘটনা।

বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের বিশাল সমুদ্রসীমার মূল্যবান খনিজ সম্পদ, যার মধ্যে রয়েছে ইউরেনিয়াম, থোরিয়াম এবং সিমেন্ট উৎপাদনের কাঁচামাল ‘ক্লে’, এখন লুটপাটের হুমকির মুখে। গত ২১ আগস্ট থেকে ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নরওয়ের অত্যাধুনিক গবেষণা জাহাজ ‘আর ভি ড. ফ্রিডজোফ নানসেন’ বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় মৎস্যসম্পদ ও ইকোসিস্টেম জরিপের নামে প্রবেশ করে। তবে এই জরিপের আড়ালে অগভীর সমুদ্রের তলদেশে থাকা ইউরেনিয়াম, থোরিয়াম, এবং অন্যান্য মূল্যবান খনিজ সম্পদ লুটের মার্কিন পরিকল্পনা রয়েছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সম্প্রতি বাংলাদেশের জলসীমায় এসে পৌঁছেছে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর জাহাজ ইউএসএস ফিৎসজেরাল্ড। এর আগে গত মাসে চট্টগ্রামে মার্কিন বিমানবাহিনীর মহড়া হয়। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইকোনমিক টাইমস জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র “কোয়াড পোর্টস ফর ফিউচার” কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশে একটি বন্দর ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে। এর লক্ষ্য বঙ্গোপসাগরে নিজেদের উপস্থিতি জোরদার করা এবং চীনের প্রভাব কমানো।

সম্প্রতি ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মধ্যে প্রাথমিক বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম ধাপে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর তারা বন্দর নির্মাণ বা উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে পারে। সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্র সেন্টমার্টিন দ্বীপের এক-তৃতীয়াংশ প্রায় ৯৯ বছরের জন্য লিজ নিতে আগ্রহী। প্রথমে দ্বীপের একটি অংশ বিদেশিদের জন্য পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হলেও, পরবর্তী সময়ে। সেটি সামরিক ঘাঁটিতে রূপ নিতে পারে। বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সরাসরি আপত্তি না তুললেও চীন ও ভারতের বিরোধিতার ঝুঁকি নিয়েই চিন্তিত

বিশ্লেষকরা বলছেন, মিয়ানমারে চীন-সমর্থিত গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পের পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কৌশলগত অবস্থান নিতে সক্রিয় হয়েছে। রোহিঙ্গা সংকট, মানবিক করিডর, এবং চট্টগ্রাম বন্দর—সব মিলে এই অঞ্চলটি চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিযোগিতার গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। সেইসঙ্গে বঙ্গোপসাগরে থাকা প্রাকৃতিক সম্পদও উত্তোলন করতে চায় দেশটি।

রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে প্রস্তাবিত ‘মানবিক করিডোর’ এখন আর কেবল একটি ত্রাণ কার্যক্রম নয়—এটি হয়ে উঠেছে একটি বহুমাত্রিক রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক টুল। এতে বাংলাদেশের ভূখণ্ড, নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। অভ্যন্তরীণ রাজনীতির আড়ালে যেভাবে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর প্রভাব, বিতর্কিত অর্থায়ন এবং গোপন বৈঠকের সমন্বয়ে করিডোর বাস্তবায়নের কৌশল এগোচ্ছে, তা নীতিগত ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থের দিক থেকে স্পষ্টভাবে প্রশ্নবিদ্ধ।

এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে একটি “খ্রিস্টান রাজ্য” গঠনের ষড়যন্ত্রের আশঙ্কাও করা হচ্ছে, যা পূর্ব তিমুরের ঘটনার সাথে তুলনা করা হচ্ছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সতর্ক করে বলেছিলেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের কিছু অংশ নিয়ে এমন একটি রাষ্ট্র গঠনের ষড়যন্ত্র চলছে। তিনি সেন্টমার্টিনে মার্কিনিরা ঘাঁটি করতে চায় সেই কথাও জানিয়েছিলেন।

আমেরিকাকে সমর্থন দিচ্ছে জাতিসংঘ
২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনে সহিংসতা ও অরাজকতা ছড়িয়ে পড়ে। সরকারি স্থাপনা ধ্বংস, কারাগারে হামলা, জঙ্গি মুক্তি এবং পুলিশের ওপর নৃশংস হামলা হয়। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনার ভলকার টুর্ক সরাসরি কোনো নিন্দা জানাননি বরং আন্দোলনকারীদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন। পুলিশ হত্যা ও সহিংসতা জাতিসংঘ উপেক্ষা করে। সম্প্রতি সেনাবাহিনী ধ্বংসের চক্রান্ত করছে তারা।

সম্প্রতি ট্রাইব্যুনালের এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের বাংলাদেশ মিশন প্রধান হুমা খানের উপস্থিতি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

সূত্র বলছে, সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করতে চাওয়ার মূল উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশে একটি খ্রিস্টান রাজ্য প্রতিষ্ঠা ও এরসঙ্গে উল্লেখযোগ্য অংশ আমেরিকার কাছে হস্তান্তর করা। সেনাবাহিনীকে দুর্বল করতে পারলেই দেশে জঙ্গিবাদের প্রসার ঘটবে। আর এতে করে দেশে মার্কিনি ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন সহজ হবে।

গত বছর ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে সহিংসতা ও অরাজকতা। সরকারি স্থাপনা ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, কারাগারে হামলা, জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের মুক্তি, এবং পুলিশের ওপর নৃশংস হামলার ঘটনা দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন।

এসব ঘটনার পরও জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনার ভলকার টুর্ক কোনো সরাসরি প্রতিক্রিয়া জানাননি। বরং ২৫ জুলাই ২০২৪-এ প্রকাশিত বিবৃতিতে তিনি একতরফাভাবে সরকারের সমালোচনা করে আন্দোলনকারীদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেন। তিনি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর জোর দিলেও, পুলিশ সদস্যদের নির্মম হত্যা, যেমন—এএসআই মোক্তাদিরকে ঝুলিয়ে হত্যা এবং বনানীতে পরিদর্শক মাসুদ পারভেজকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনাগুলো সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেন।

সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয় ছিল জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণ নিয়ে হুমকি। মার্চ ২০২৫-এ বিবিসির হার্ড টক অনুষ্ঠানে ভলকার টুর্ক নিজেই জানান, আন্দোলন দমন করতে সেনাবাহিনী ব্যবহার করা হলে, তাদের শান্তিরক্ষা মিশনে আর থাকতে দেওয়া হবে না। এই হুমকির পর সেনাবাহিনী কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। ফলাফল— সহিংসতা আরও বাড়ে। বিশ্লেষকদের মতে, সেনাবাহিনী জাতিসংঘের চাপের কারণে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকে, যা দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ভঙ্গুর করে তোলে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, জাতিসংঘ যখন সেনাবাহিনীকে হুমকি দেয়, তখন সেটা কার্যত আইন শৃঙ্খলার ভাঙনকে উৎসাহ দেওয়ার সামিল। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে দাবি করা হয়—জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত ১,৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। তবে এই হত্যাকাণ্ডের পেছনের পক্ষগুলোর নাম প্রকাশ করা হয়নি।

অন্যদিকে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন ও অন্তর্বর্তী সরকারের হিসাব মতে নিহত সংখ্যা যথাক্রমে ৮২০ এবং ৮৩৪। রিপোর্টে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ওপর সহিংস হামলা, বাসাবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ও গণপিটুনির ঘটনাগুলো উপেক্ষা করা হয়।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভলকার টুর্ক আন্দোলনকারীদের প্রতি সমর্থন দিয়েছেন, যেন তিনি মানবাধিকার কমিশনার নন, বরং রাজনৈতিক পক্ষের মুখপাত্র।

এদিকে জাতিসংঘ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস জাতিসংঘের ভূমিকার জন্য প্রকাশ্যে কৃতজ্ঞতা জানান। তার বক্তব্য— গত বছরের জুলাই-আগস্টের অন্ধকার সময়ে জাতিসংঘ বাংলাদেশের পাশে ছিল।”

বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই অগ্নিকাণ্ডগুলো কি অন্য কোনো বড় কৌশলগত বা রাজনৈতিক ঘটনা (যেমন, পাহাড়, বন্দর বা করিডর সংক্রান্ত বিতর্কিত বিষয়) থেকে জনদৃষ্টি সরানোর জন্য কোনো ‘ডাইভারশনারি ট্যাকটিক্স’? বারবার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আগুন লাগার পুনরাবৃত্তি এই সন্দেহকে আরও জোরালো করে। মনে রাখতে হবে, যেকোনো বড় বিপর্যয় দেশের মনোযোগকে অন্যদিক থেকে সরিয়ে দিতে সক্ষম।

Read more

Local News