Friday, October 24, 2025

যে দাঙ্গাবাজরা দেশটাকে লুটেপুটে খাচ্ছে, তারাই এখন আইনশৃঙ্খলার অবনতির কথা বলছে!

Share

মজার ব্যাপার হলো, যারা জুলাই মাসে সারাদেশে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছিল, থানায় থানায় আগুন দিয়েছিল, অস্ত্র লুট করেছিল – তারাই এখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে। এর চেয়ে বড় ভণ্ডামি আর কী হতে পারে? যে মানুষগুলো নিজেরাই দেশের নিরাপত্তাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে, তারাই এখন নির্বাচনের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত সাজছে।

চলতি বছরের প্রথম আট মাসে খুনের সংখ্যা বেড়েছে, ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েছে – এটা সত্য। কিন্তু এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী কারা? জুলাই মাসে যখন দেশজুড়ে পরিকল্পিত হামলা চলছিল, যখন পুলিশ সদস্যদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে হত্যা করা হচ্ছিল, যখন সরকারি স্থাপনায় আগুন দেওয়া হচ্ছিল – তখন এই তথাকথিত গণতন্ত্রের ধ্বজাধারীরা কোথায় ছিলেন? তারা তো উৎসবে মেতে উঠেছিলেন।

এখন দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কথা বলা হচ্ছে নির্বাচন বানচালের জন্য। কিন্তু যে ষড়যন্ত্র একটা নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে, সেই ষড়যন্ত্রের কথা কেউ বলতে চায় না। মোহাম্মদ ইউনূসের মতো একজন মানুষ, যার বিরুদ্ধে সুদখোরির অভিযোগ রয়েছে, যিনি দীর্ঘদিন ধরে বিদেশি শক্তির প্রিয়পাত্র ছিলেন – তিনি হঠাৎ করে দেশের কর্ণধার হয়ে গেলেন। এটা কি স্বাভাবিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ছিল?

জুলাই মাসের ঘটনাগুলোকে দাঙ্গা বলা হচ্ছে, কিন্তু আসলে সেটা ছিল একটা সুপরিকল্পিত অভ্যুত্থান। বিদেশি টাকায় পরিচালিত, ইসলামি জঙ্গিগোষ্ঠীর সহায়তায় সংঘটিত এবং সামরিক বাহিনীর নীরব সমর্থনপুষ্ট। যে দেশে বছরের পর বছর ধরে একটা নির্বাচিত সরকার চলছিল, সেখানে হঠাৎ করে এমন বিশৃঙ্খলা তৈরি হলো কীভাবে? কারা এই বিশৃঙ্খলার পেছনে ছিল?

এখন যারা আইনশৃঙ্খলার অবনতির জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করছেন, তারা কি ভুলে গেছেন যে তারা নিজেরাই এই পরিস্থিতির স্রষ্টা? পুলিশ বাহিনীকে যখন টার্গেট করে মারা হচ্ছিল, তখন কি এই বিশ্লেষকরা তাদের নিরাপত্তার কথা ভেবেছিলেন? যখন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার আগ্নেয়াস্ত্র লুট হয়ে গিয়েছিল, তখন কি এই উদ্বিগ্ন কণ্ঠস্বরগুলো শোনা গিয়েছিল?

আর এখন খাগড়াছড়ির ঘটনায় ভারত আর ফ্যাসিস্টদের ইন্ধনের কথা বলা হচ্ছে। বিষয়টা পরিষ্কার করা দরকার – যারা নিজেরা বিদেশি সহায়তায় ক্ষমতায় এসেছেন, তারা অন্যদের ওপর বিদেশি প্রভাবের অভিযোগ আনছেন। এটা কেমন ধরনের নীতি? যে দেশের সংবিধান লঙ্ঘন করে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করে ক্ষমতায় আসা হয়, তারা কীভাবে অন্যদের অবৈধ তৎপরতার অভিযোগ আনতে পারেন?

জামায়াতে ইসলামীর মতো একটা সংগঠন, যে সংগঠনের স্বাধীনতাযুদ্ধবিরোধী ভূমিকা ছিল, যাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে – তারা এখন নতুন ক্ষমতাকাঠামোর অংশীদার। এই বাস্তবতাকে অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।

পুলিশ এখন বলছে তারা প্রশিক্ষণ নিচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো – যে বাহিনীকে জুলাই মাসে নির্মমভাবে আক্রমণ করা হয়েছিল, যাদের মনোবল ভেঙে দেওয়া হয়েছিল, তাদের কাছ থেকে এখন কী আশা করা যায়? যে সদস্যরা দেখেছেন তাদের সহকর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে, তাদের থানায় আগুন দেওয়া হচ্ছে, তাদের পরিবারকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে – তারা কি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে কাজ করতে পারবেন?

আইনশৃঙ্খলার অবনতির জন্য যে কারণগুলো দায়ী, সেগুলো এড়িয়ে গিয়ে শুধু পরিসংখ্যান দেখিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলে হবে না। মূল সমস্যার দিকে তাকাতে হবে। একটা অবৈধ সরকার, যে ক্ষমতায় এসেছে সহিংসতার মাধ্যমে, সেই সরকার কীভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল করবে? যারা নিজেরাই আইনের শাসনকে পায়ে মাড়িয়েছে, তারা কীভাবে আইনের প্রয়োগ করবে?

এখন নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু কোন নির্বাচন? একটা অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যারা ক্ষমতায় এসেছে, তাদের অধীনে নির্বাচন কতটা স্বচ্ছ হবে? যে মানুষগুলো সংবিধানকে মানে না, গণতান্ত্রিক রীতিনীতিকে মানে না, তারা কীভাবে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা করবে?

দেশের মানুষ দেখছে, বুঝছে। যে নাটক চলছে, সেটা আর কতদিন চলবে সেটাই এখন প্রশ্ন। একটা দেশকে ধ্বংস করে, তার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দুর্বল করে, তারপর সেই অবস্থাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার চেষ্টা চলছে। এর চেয়ে বড় প্রতারণা আর কী হতে পারে?

আরো পড়ুন

সদ্য প্রকাশিত