Wednesday, October 22, 2025

সঞ্চয়পত্রে কাঁচি চালিয়ে মধ্যবিত্তকে ভিখারি বানানোর মহাপ্রকল্প ইউনুসের

Share

সঞ্চয়পত্রের সুদ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে এই নতুন হার। যে সরকার নিজেই অবৈধ, তারা এখন বৈধ নাগরিকদের গচ্ছিত সঞ্চয়ের ওপর ছুরি চালাচ্ছে। মজার ব্যাপার হলো, যে মানুষটা সারাজীবন দু’পয়সা জমিয়ে রেখেছিল বুড়ো বয়সের ভরসা হিসেবে, তার ঘাড়েই এসে পড়ছে এই আঘাত।

বলা হচ্ছে সুদের বোঝা কমানোর কথা। কিন্তু কার বোঝা? সরকারের। আর কে দিচ্ছে সেই সুবিধা? সাধারণ মানুষ। যে মানুষের কোনো দোষ নেই, যারা শুধু চেয়েছিল নিজেদের টাকা একটু নিরাপদে রাখতে, তাদেরকেই এখন শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।

ইউনুস সাহেবের অন্তর্বর্তী সরকার এসেছিল কীভাবে, সেটা এখন আর কারো অজানা নেই। জুলাই দাঙ্গার সেই রক্তাক্ত দিনগুলোর কথা এখনো মনে আছে সবার। নির্বাচিত সরকারকে সরিয়ে যারা ক্ষমতায় বসেছে, তারা এখন যা খুশি তাই করছে। আর তার খেসারত দিচ্ছে সাধারণ মানুষ।

ট্রেজারি বিল আর বন্ডের কথা বলা হচ্ছে। সেখানে সুদ কম, তাই সরকারের সস্তা পড়ে। কিন্তু সেসব জিনিসে বিনিয়োগ করে কোন সাধারণ মানুষ? ওইসব তো ধনীদের খেলা, প্রতিষ্ঠানের খেলা। যে বুড়ো মানুষটা অবসরের পর দশ লাখ টাকা সঞ্চয়পত্রে রেখেছিলেন, ভেবেছিলেন এই টাকার সুদ দিয়ে কোনোমতে সংসার চলবে, তার কপালে এখন কী আছে?

বিআইবিএমের সাবেক মহাপরিচালক তৌফিক আহমেদ চৌধুরী ঠিকই বলেছেন। সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমছে, তারপরও সুদ কমানো হচ্ছে। এটা তো উল্টো যুক্তি। কোনো জিনিসের চাহিদা কমলে তার দাম বাড়ানোর কথা, কমানোর নয়। কিন্তু এখানে হচ্ছে উল্টো। কারণ এটা বাজার না, এটা ক্ষমতার খেলা।

মুস্তফা কে মুজেরী যা বলেছেন, তা প্রকাশ্য দিবালোকের মতোই সত্য। মধ্যবিত্ত শ্রেণি এমনিতেই চাপে আছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি তাদের নাকাল করে ফেলেছে। আর এখন যদি তাদের সঞ্চয়ের ওপরেও আঘাত আসে, তাহলে তারা যাবে কোথায়? শেয়ারবাজার? সেখানে তো আরো বড় জুয়া। ব্যাংক? সেখানেও তো একই সুদ, আরো কম।

সঞ্চয়পত্রের বর্তমান সর্বোচ্চ সুদহার ১১.৯৮ শতাংশ। এটাকে কমিয়ে ১০ শতাংশের আশেপাশে আনার পরিকল্পনা। শুনতে খুব বেশি মনে না হলেও, একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীর জন্য এটা অনেক বড় পার্থক্য। দশ লাখ টাকায় বছরে প্রায় বিশ হাজার টাকা কম আসবে। মাসে প্রায় দেড় হাজার টাকা। একজন সাধারণ পরিবারের জন্য এটা কি কম?

ইউনুস সাহেব মাইক্রোক্রেডিটের নামে গরিবদের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে নোবেল পেয়েছিলেন। এখন তিনি নিজে সরকার চালাচ্ছেন, আর সাধারণ মানুষকে দিচ্ছেন কম সুদ। এই বিপরীত মুখী নীতির ব্যাখ্যা কী? গরিবদের কাছ থেকে বেশি নেওয়া যাবে, কিন্তু তাদের দেওয়া যাবে কম, এটাই কি নিয়ম?

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে এই অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রে নিট ঘাটতি হয়েছে ছয় হাজার কোটি টাকার বেশি। মানুষ টাকা তুলে নিচ্ছে, নতুন করে রাখছে না। এর মানে কী? মানুষের আস্থা কমছে। তারা ভয় পাচ্ছে। তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। আর এই অবস্থায় সরকার সুদ কমিয়ে সেই আস্থাহীনতাকে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।

নতুন নিয়মে বলা হয়েছে কম বিনিয়োগে বেশি সুদ, বেশি বিনিয়োগে কম সুদ। শুনতে ভালো লাগলেও এটাও একটা ফাঁদ। কারণ বেশি টাকা যার আছে, তার অন্য জায়গায় বিনিয়োগের সুযোগ আছে। কিন্তু যার দুই-তিন লাখ টাকা আছে, তার কোনো বিকল্প নেই। ফলে সেই সামান্য টাকার ওপরও যদি সুদ কমে, তাহলে তার ক্ষতি হবে সবচেয়ে বেশি।

উৎসে কর বাড়ানোর কথাও বলা হয়েছে। পাঁচ লাখের বেশি বিনিয়োগে ১০ শতাংশ। এর মানে একজন মানুষ যদি ছয় লাখ টাকা রাখে, তাহলে সে আগের চেয়ে কম সুদ পাবে, আবার বেশি কর দিতে হবে। দুদিক থেকে চাপ। এটা কি ন্যায়বিচার?

সরকার বলছে ঋণের খরচ কমাতে হবে। কিন্তু সেই খরচ কমানোর বোঝা কেন পড়বে সাধারণ মানুষের ওপর? যে সরকার বৈধ পথে আসেনি, যাদের ক্ষমতায় আসার পেছনে বিদেশি টাকা আর সামরিক সমর্থনের কথা শোনা যায়, তারা কি মানুষের গচ্ছিত সম্পদের রক্ষক হওয়ার নৈতিক অধিকার রাখে?

অর্থনীতিবিদরা ঠিকই বলছেন যে এতে সঞ্চয় প্রবণতা কমবে। কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা হলো, এতে মানুষের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার ধারণা নষ্ট হবে। একজন চাকরিজীবী যখন ভাবেন যে তিনি একটু একটু করে টাকা জমাবেন আর অবসরে সেই টাকার সুদে চলবেন, তখন তার সেই পরিকল্পনাটাই ভেঙে পড়ে এই ধরনের সিদ্ধান্তে।

সবচেয়ে বিপদে পড়বেন বিধবা নারীরা, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা, প্রবাসীদের বৃদ্ধ বাবা-মায়েরা। যাদের আর আয়ের কোনো উৎস নেই, যারা শুধু নির্ভর করেন জমানো টাকার সুদের ওপর। তাদের কথা কি ভেবেছে এই সরকার?

একটা সরকার যখন জনগণের ভোটে আসে না, যখন তারা আসে রক্তের বিনিময়ে, তখন তাদের কাছে জবাবদিহিতার প্রশ্ন থাকে না। তারা যা ইচ্ছা তাই করতে পারে। সঞ্চয়পত্রের সুদ কমানো তার একটা উদাহরণ মাত্র। আগামীতে আরো কী কী আসবে, সেটা ভাবতেই গা শিউরে ওঠে।

মধ্যবিত্ত এই দেশের মেরুদণ্ড। তারা চুপচাপ সব সহ্য করে যায়। কিন্তু তাদের সহ্যের একটা সীমা আছে। সেই সীমায় যখন টান পড়ে, তখন সমাজে অস্থিরতা আসে। ইউনুস সরকার হয়তো ভাবছে ঋণের খরচ কমিয়ে তারা অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করবে। কিন্তু তারা ভুলে যাচ্ছে যে সমাজকে অস্থিতিশীল করে কখনো অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখা যায় না।

জানুয়ারি আসছে। তার সাথে আসছে নতুন সুদহার। মধ্যবিত্তের চোখে যে অন্ধকার নেমে আসবে, সেটা শুধু টাকার হিসাবের অন্ধকার নয়। এটা আস্থার সংকট, নিরাপত্তাহীনতার অন্ধকার। একটা অবৈধ সরকার যখন বৈধ নাগরিকদের সঞ্চয়ের ওপর হাত দেয়, তখন সেটা আর শুধু অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত থাকে না। এটা হয়ে ওঠে ক্ষমতার অপব্যবহার।

Read more

Local News